সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষ্ণ মানুষ না দেবতার অংশাবতার- সেই বিতর্ক এখনও মেটেনি! পাতার পর পাতা এই নিয়ে লেখালেখি হয়েছে এবং হবেও!
তবে মথুরা, বৃন্দাবন পরিক্রমায় যে তাঁকে সম্যক ভাবেই উপলব্ধি করা যায়, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। জন্মভূমি এবং লীলাভূমি- দুই এখনও ধারণ করে রেখেছে তাঁর কীর্তির নানা দিক। সযত্নে রক্ষা করেও চলেছে।
এ ছিল কৃষ্ণ এবং তাঁর কীর্তি উপলব্ধি করার আধ্যাত্মিক দিক! এর বাইরেও আর এক জায়গায় কৃষ্ণের দর্শন লাভ সম্ভব! সাক্ষাৎ দর্শন!
শুধু সেই দর্শনলাভের পরে কেউ আর বেঁচে থাকেন না! জীবনের পালা সাঙ্গ করে তাঁকে চলে যেতে হয় এই জগৎ ছেড়ে!
শোনা যায়, বৃন্দাবনের নিধিবন মন্দির কৃষ্ণের এই সাক্ষাৎ দর্শনের সাক্ষী। এখানেই রাধা এবং সহস্র গোপিনীর সঙ্গে রাসলীলায় মেতেছিলেন ভারতপুরুষটি।
সেই রাসলীলা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। আজও, প্রতি রাতে, নিধিবনে রাধা এবং গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা করে চলেন কৃষ্ণ।
নিধিবনের মন্দিরে কৃষ্ণকে ভক্তরা বলেন ঠাকুরজি। নয়নমনোহর বসনে, ভূষণে সাজিয়ে রাখেন তাঁকে। সারা দিন ধরে নানা উপচারে সাঙ্গ করেন তাঁর পূজা।
এবং রাত নামলে পান আর সুপারি দিয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যান। জানা যায়, পরের দিন সকালে সেই পান-সুপারি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
শুধু নিধিবন মন্দিরই নয়। কাহিনি বলে, বৃন্দাবনের রং মহলে রাত নামলে হাজির হন কৃষ্ণ। নিজে হাতে সাজিয়ে দেন রাধাকে। তার পরেই শুরু হয় দিব্য, অলৌকিক রাসলীলা।
কিন্তু যিনি দেবতা, একই সঙ্গে প্রেমের প্রতীকও, তিনি কেন ভক্তের মৃত্যুর কারণ হন?
বৃন্দাবন বলে, নিধিবনে যে সব গাছ দেখা যায়, তারা সবাই আসলে গোপিনী। বৃক্ষরূপে তাঁরা যুগের পর যুগ অপেক্ষা করে চলেছেন কৃষ্ণের জন্য। তাঁর পথ দেখছেন রাধাও। তাই প্রতি রাতে রাসলীলায় তাঁদের সেই বিরহে প্রেমের প্রলেপ দেন কৃষ্ণ।
এই সময়টা রাধা এবং গোপিনীদের কাছে তো বটেই, তাঁর কাছেও বড় কাঙ্ক্ষিত। তাই এই সময়ে কারও উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না তিনি! বিশেষ করে গোপিনীরা। তাই রাতে নিধিবনে মানুষের উপস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা। গোপিনীরা তৎক্ষণাৎ বৃক্ষরূপ ধারণ করে পিষে ফেলেন তাকে!
তবে, এই মৃত্যু নিয়ে মতান্তরও রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, কৃষ্ণ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন না। তাঁর দিব্য রূপ এবং লীলা দর্শনে আপনা-আপনি শেষ হয়ে যায় বেঁচে থাকার ইচ্ছা। মন চায়, কৃষ্ণে লীন হয়ে যেতে। এবং সেটাই হয়। তাঁর দর্শনের পরে ইহলোকের মায়া কাটিয়ে সাক্ষাৎ মোক্ষ প্রাপ্তি হয়।
ইতিপূর্বে ভগবানের দর্শন লাভের পরে এরকম মৃত্যুর ঘটনার সাক্ষী থেকেছে নিধিবন। তাই এখন আর কাউকেই রাত নামলে সেখানে যেতে দেওয়া হয় না। পূজারীরাও যান না! পান-সুপারি রেখে চলে আসেন সেখান থেকে।
অবশ্য, মন চাইলে অন্য ভাবেও দেখা যেতে পারে বিষয়টাকে। জীবৎকালে পূর্ণতা পায়নি রাধা-কৃষ্ণের প্রেম। এখন যদি রোজ রাতে সেই প্রেম ফিরে আসে নিধিবনে, তবে সেখানে অনুপ্রবেশ কি উচিত হবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.