সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘লায়ন কিং’-এর রাজপ্রাসাদ। ভগ্ন দশায় কালের কবলে পড়ে ধুঁকছিলই বলা চলে। অথচ সেই প্রাসাদের অন্দরে গুপ্ত খাজানার ছড়াছড়ি। ঘড়া ভরা মোহর না থাক, যা আছে ঐতিহাসিক মূল্যে তা অমূল্য। আর তাই আটজন বিশেষজ্ঞের এক বিশেষ দল পৌঁছালেন লাদাখের রাজধানীতে। তুলি, ব্রাশ দিয়ে ছেড়ে অত্যন্ত যত্ন সহকারে তাঁরা একটু একটু করে প্রাসাদ থেকে মুছে দিচ্ছেন কালের কালিমা।
এই ‘লায়ন কিং’ অবিশ্যি সত্যিকারের সিংহ নয়। কিংবা ডিসনির বিখ্যাত অ্যানিমেশন চরিত্র মুফাসা বা সিম্বাও নয়। এই লায়ন কিং লাদাখের এক পরাক্রমী রাজা। যাঁকে তাঁর আসল নাম সেঙ্গে নামগ্যালের থেকে লায়ন কিং বলতেই বেশি পছন্দ করতেন প্রজারা। আসলে লাদাখের নামগ্যাল রাজত্বের এই রাজার আমলে অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি বিকাশ হয়েছিল। যুদ্ধ নীতিতেও অসাধারণ বুদ্ধিমান ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ছিলেন মার্শাল আর্টে দক্ষ। তাঁর বীরত্বের জন্য তাঁর রাজত্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁরই হাতে। আর এই সেঙ্গে নামগ্যলই আবার বিখ্যাত লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় সুন্দর সুন্দর রাজপ্রাসাদ এবং বৌদ্ধ গুম্ফা বানানোর জন্য। সম্প্রতি ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগের যে আট বিশেষজ্ঞের দলটি রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছেন সেটি লাদাখের এই বীর রাজারই তত্ত্বাবধানে তৈরি।
১৬১৬ খ্রীষ্টাব্দে সম্পূর্ণ হওয়া এই প্রাসাদটিতে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বাস করেছে লাদাখের রাজ পরিবার। তারপর অবশ্য তাঁদের প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে হয় ডোগরা বাহিনীর আক্রমণের পর। লেহর এই প্রাসাদ ছেড়ে তাঁরা আশ্রয় নেন এখান থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তাঁদের আরেকটি প্রাসাদ স্টক প্যালেসে। আর তারপর দীর্ঘদিন পরিত্যক্তই ছিল এই রাজপ্রাসাদ। কালের নিয়মে তো বটেই পর্যটকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারেও নষ্ট হয়েছে প্রাসাদের বহু কারুকাজ। রাজপ্রাসাদের ছ’তলায় থাকতেন রাজ পরিবার। বাকি তলার বিভিন্ন এলাকায় ছিল রাজবাড়ির রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর, খাওয়ার ঘরের মতো জায়গা। একদম নীচে শস্যভান্ডার। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘরের দেওয়ালে রয়েছে রঙিন দেওয়াল চিত্র। যা প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ দলটি। তারা বলেছে, প্রাকৃতিক রং দিয়ে তৈরি বলেই ৪০০ বছর পরও রঙের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়নি। এছাড়া যেসমস্ত চিনা থাংকা পাওয়া গিয়েছে, সেগুলিও মূল্যবান। কারণ সেগুলি তৈরি করা হয়েছে, বহুমূল্য পাথরের গুঁড়ো দিয়ে। এ সবই সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.