ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: দীর্ঘ কয়েক বছর পর প্রবল উৎসাহে ত্রিপুরায় (Tripura) একুশ জুলাইয়ের কর্মসূচি করেছে তৃণমূল। বঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর এই কর্মসূচি নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যে আকর্ষণের শেষ ছিল না। তাতে বক্তব্যের শুরুতেই ত্রিপুরার নাম করেছেন তৃণমূলনেত্রী। এর মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সে রাজ্যে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ২০২৩ সালে সে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সব মিলিয়ে সে রাজ্যে নিজেদের উত্থান নিয়ে উৎসাহী TMC। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গের বিশেষ কয়েকজন নেতা–নেত্রীকে নিয়ে প্রবল ‘ক্রেজ’ তৈরি হয়েছে ত্রিপুরায়। কারা তাঁরা?
তালিকায় প্রথম নাম বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal)। তারপর মন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা, সাংসদ ডা. কাকলি ঘোষদস্তিদার, আর সুখেন্দুশেখর রায়। এর প্রধান কারণ ২০১৮ সালে সে রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন। সে সময় এ রাজ্য থেকে এই ক’জনই বারবার গিয়ে দলীয় প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৪টিতে প্রার্থীও দিয়েছিল তৃণমূ্ল। আর সেই সময়েই অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে প্রবল উৎসাহ তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। এর বিশেষ কারণ অনুব্রত মণ্ডলের গা গরম করা বক্তৃতা। তার পরের বছরই দেশে লোকসভা নির্বাচন ছিল। ফলে ততদিনে অনুব্রতর নানা উক্তি তাঁর খ্যাতি তাঁকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে শুরু করেছে।
ত্রিপুরায় তখন আবার এক সন্ধিক্ষণ। বাম শাসন পতনের মুখে। TMC যোগ দিয়েও শেষ মুহূর্তে বিজেপিতে যোগ দেন সে রাজ্যের সাত কংগ্রেস বিধায়ক। ফলে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সেখানে বেগ পেতে হলেও যতটুকু ভোট তৃণমূলের পক্ষে পড়েছিল তা এই অনুব্রত মণ্ডলদের জন্যই। BJP’র মুখ্যমন্ত্রী সে রাজ্যে ইতিমধ্যে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ফলে বিরোধী ভূমিকায় থাকা তৃণমূলকর্মীদের মনোবল বাড়াতে অনুব্রতর বক্তৃতা যে ‘চড়াম চড়াম’ করে বাংলার ভোটের ফলের ঢেউয়ের রেশ সে রাজ্যে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলতে পারে, তা নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত স্থানীয় নেতৃত্ব।
সে রাজ্যে তৃণমূলের সভাপতি আশিসলাল সিং বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী শশী পাঁজা, কাকলি ঘোষদস্তিদাররা সে সময় রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। যাঁদেরই ঘরে গিয়েছিলেন, তাঁরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের নিয়ে নতুন করে আবার আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমাদের দলের কর্মীরা, সাধারণ মানুষ যতজনের সঙ্গে আমাদের সরাসরি পরিচয় রয়েছে তাঁরাই এঁদের কথা জিজ্ঞাসা করেন। এঁরা কবে আসবেন বারবার জানতে চান।” তা ছাড়া সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ও (Sukhendu Sekhar Roy) সেখানে বেশ কিছুদিন ঘাঁটি গেড়ে কাজ করেছিলেন। ফলে তাঁকে নিয়েও আগ্রহ তৈরি হয়েছিল মানুষের মধ্যে। এখন আবার নতুন করে তাঁদের ত্রিপুরায় দলের কর্মীরা দেখতে চাইছেন বলে জানাচ্ছে নেতৃ্ত্ব।
একুশের কর্মসূচি শেষ করার পরের পদক্ষেপ কী হবে, তা জানতে এর মধ্যেই দিল্লি যাওয়ার কথা আশিসবাবুর। সেখানে এখন তৃণমূলের সংসদীয় দলের পুরো টিম মজুত। রয়েছেন অভিষেক (Abhisek Banerjee)। সোমবার যাওয়ার কথা তৃণমূলনেত্রী তথা সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই পরিস্থিতিতে সেখানে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ত্রিপুরা নেতৃত্বের। তবে আপাতত তৃণমূলনেত্রীর নির্দশমতো পাহাড় থেকে সমতল, সর্বত্র লাগাতার আন্দোলনের পথেই থাকার কথা বলে দিয়েছেন দলের কর্মীদের। তার পর একে একে দলের কর্মীদের সামনে ভোটমুখী পরিকল্পনা তৈরির করে দেওয়ার জন্য ফের কলকাতায় আসার কথা রয়েছে ত্রিপুরা তৃণমূল নেতৃ্ত্বের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.