বাবার সঙ্গে অনুব্রতকন্যাী সুকন্যা মণ্ডল। ফাইল ছবি।
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কথা ছিল, দেখা হবে। দেখা হলও। কিন্তু মেয়েকে বন্দিদশায় দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না বাবা। ভেসে গেলেন আবেগে। মেয়ে কেমন আছে, তা জানার আগে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কেন মেয়ে দিল্লি এল? কারণ, মেয়ে দিল্লি এসেছে বলেই গ্রেপ্তার হয়ে জেলবন্দি। না এলে হয়ত সে ভাল থাকত বাড়িতে, নিজের চেনাজানা পরিবেশে। শনিবার তিহাড় জেলে (Tihar Jail) এই দৃশ্য দেখা গেল। দৃশ্যের দুই চরিত্র বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে শনিবার তাঁরা দেখা করলেন তিহাড় জেলেই। গরু পাচার মামলায় পিতাপুত্রী এখন দু’জন জেলবন্দি।
গত আগস্ট মাস থেকে অনুব্রত মণ্ডল জেলবন্দি। মাসখানেক হল তদন্তের স্বার্থে আসানসোল জেল থেকে তাঁকে দিল্লির তিহাড় জেলে নিয়ে এসেছে ইডি (ED)। গরু পাচার মামলায় ইডি ইতিমধ্যে চার্জশিট পেশ করেছে। তাতে অনুব্রত মণ্ডলের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ আছে। আর সেই টাকা মেয়ের অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। সুকন্যা (Sukanya Mandal) স্কুল শিক্ষিকা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে কোটি টাকার মালিক, সেই প্রশ্নের উত্তরে অসংগতি পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। সপ্তাহখানেক আগে মেয়ে সুকন্যাও ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রথম ২ দিন ইডি হেফাজতে থাকার পর তাঁরও ঠাঁই হয়েছে তিহাড়ে। বাবা-মেয়েকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।
একই জেলে থাকলেও অনুব্রত ও সুকন্যার মধ্যে বিশাল দূরত্ব। তাই দেখা করার জন্য তাঁরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। শনিবার দেখা করার অনুমতি মেলে। সেইমতো আজ তাঁদের দেখা হয়। জেল সূত্রে খবর, বাবা বারবার মেয়ের কাছে জানতে চান, ”তোকে তো দিল্লি আসতে বারণ করেছিলাম। তুই কেন এলি? কার কথায় এলি?”
এর আগে মেয়ের গ্রেপ্তারির খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল (TMC) সভাপতি। ইডি ‘বাহাদুরির কাজ’ করেনি বলে মন্তব্য করেছিলেন। এমনকী আগেরদিন তাঁকে আদালতে পেশের সময় ইডি অফিসারকে সামনে পেয়ে তাঁর হাত ধরে আবেগঘন গলায় অনুব্রত বলে উঠেছিলেন, ”মেয়েটাকে গ্রেপ্তার করলেন! আপনার বিবেক বলে কিছু আছে তো নাকি?” এরপর বন্দি মেয়েকে সচক্ষে দেখে বাবা যে আরও আবেগে ভাসবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তিহাড় জেলে তাই শনিবার পিতাপুত্রীর মিলন হল ঠিকই, তবে তা আনন্দের নয়, আক্ষেপের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.