সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘তা শ্বাসকষ্ট একটু হয় বইকি, ওই রাতের দিকে’, বললেন মানাম্মা। একমনে বাজির দড়ি বাঁধছিলেন তিনি। সেটি দেখতে অনেকটাই ‘বুড়িমার চকোলেট বোমা’র মতো। বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা শিবকাশীর ‘কারিগর’ থুড়ি বাজি নির্মাতা। দিওয়ালি উপলক্ষে তাঁর কাজ বেড়েছে অনেক। খাওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না। একনাগাড়ে কাজ করলে মাঝেমাঝেই দমক দিয়ে কাশি শুরু হচ্ছে। রুজিরুটির পাশাপাশি উপরি পাওনা গন্ধক আর সোড়া। শরীরের আপত্তি না মেনেই ফুসফুসে সংসার পেতেছে বিষাক্ত রসায়নিক। কষ্ট হচ্ছে তো এই কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন, জিজ্ঞেস করা হলে শীতল চোখে মানাম্মার পালটা প্রশ্ন ‘খাব কি?’
ভারতের সব থেকে বড় বাজি নির্মাণ কেন্দ্র তামিলনাড়ুর বিরুধুনগর জেলার শিবকাশী শহর। দিওয়ালি থেকে ইদ, দেশের ৯০ শতাংশ বাজির জোগান দেয় এই শহরটি। কয়েক লক্ষ মানুষের অন্ন সংস্থান জড়িয়ে এই ব্যবসার সঙ্গে। তাঁদের মধ্যেই একজন মানাম্মা। পার্শ্ববর্তী থিরুথাঙ্গাল গ্রামে দুই মেয়ে আর দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে সংসার তাঁর। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে ‘বিষাক্ত’ শিবকাশীই ভরসা। বাজি বেঁধে দৈনিক মেলে ১২০ টাকা। তবে এবার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা আশঙ্কিত তিনি। মালিক বলেছেন, এই মরশুম পার হলে আর কাজ হবে কি না, তা জানিয়ে দেবেন তিনি। অথচ অন্যবার দিওয়ালি শেষ হতেই পরের বছরের জন্য অর্ডার আসতে শুরু করে। এবছর নাকি তা হয়নি। ‘পরিবেশ সচেতনতা’ এবং ‘গো গ্রিন’ আন্দোলনের জিগিরে প্রবল ধাক্কা খেয়েছে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের শিবকাশীর ব্যবসা। ওই শহরে প্রায় হাজারটি বাজি কারখানা রয়েছে। ৩০ কিলোমিটার ব্যসার্ধ এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ চলে এখান থেকেই। তবে বায়ুদূষণ রোধে সরকারি কড়াকড়িতে বেকায়দায় পড়েছেন অনেকেই।
‘ডি লিমা ফায়ার ওয়ার্কস’-এর সত্বাধিকারী ডি মাথান বলেন, ‘সাধারণত এই সময়ের মধ্যেই পরের বছরের দিওয়ালির জন্য বাজির অর্ডার আসা শুরু হয়। অনেকেই মূল অর্ডারের খানিকটা অ্যাডভান্স হিসেবে দিয়ে যান। কিন্তু এবছর এখনও কেউ আসেনি। আমাদের উৎপাদন প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে।’ এএফপি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, বাজি বানানো ছেড়ে অনেকেই অন্য শহরে পাড়ি দিচ্ছেন। সেখানে মজুরি, চাষবাস বা নির্মাণকাজ করছেন তাঁরা। এক বাজি নির্মাতা জানিয়েছেন, ‘গ্রিন ক্র্যাকারের’ (যে বাজি কম দূষণ ছড়ায়) পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেগুলি বানাতে খরচ বেশি পড়ে। ফলে বাজির দামও বেড়ে যায়। তাই এবছর তেমন বিক্রি হচ্ছে না। অনেক কারখানা আপাতত উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘দূষণ কমাতে সরকারের অবশ্যই পদক্ষেপ করা উচিত। তবে বাজি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা কেউ বলছে না। আরও সারা বছর এত কারখানা দূষণ ছড়ায়, একদিনের জন্য কি আমরাই দোষী?’
সব মিলিয়ে অন্যের দিওয়ালি আলোকিত করলেও এবার শিবকাশী নিজেই আঁধারে ডুবেছে। তবে বায়ুদূষণ রোধ ও পরম্পরার মধ্যে লড়াইয়ে শিবকাশীকেও যে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে হবে, তা একপ্রকার স্পষ্ট। এবং সেই পথ কী হবে, তা নির্ণয় করার দায় কিন্তু বর্তাবে সরকার উপরই। কারণ দূষণের চাইতেও এই দেশে দু’বেলা উদরপূর্তির লড়াই অনেক বেশি ভয়ানক, এখনও।
[আরও পড়ুন: নাককাটা কালীর আরাধনার প্রস্তুতি তুঙ্গে, জেনে নিন ২০০ বছরের প্রাচীন পুজোর মাহাত্ম্য]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.