সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপির মহিলা বিধায়কের প্রবেশে মন্দির অশুদ্ধ হয়েছে। তাই পরম্পরা মেনে মন্দিরটির শুদ্ধিকরণ করা হল গঙ্গাজলে। মহিলার প্রবেশে বিগ্রহটিও অপবিত্র হয়েছে। তাই অপবিত্রতা দূর করতে ২২০ কিলোমিটার উজিয়ে এলাহাবাদের গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিগ্রহকে। ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের হামিরপুর জেলার ঋষিদ্রুম আশ্রম ও লাগোয়া মন্দির। এই ঘটনাকে অজ্ঞতা বলেছেন বিধায়ক মণীষা অনুরাগী।
জানা গিয়েছে, বুন্দেলখণ্ডের এই ঋষি দ্রুমের আশ্রম ও মন্দির নাকি মহাভারতের আমলে তৈরি। সেই সময় থেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিগ্রহের পুজো করে আসছেন মন্দিরের পুরোহিতরা। প্রাচীনকাল থেকেই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। পুরোহিত ও সেবাইতদের বক্তব্য অনুযায়ী, মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশে দেবতারা কুপিত হবেন। ঈশ্বরের ইচ্ছে, কেই বা আর অমান্য করতে পারেন। তাই এতদিনে কোনও মহিলার পা পড়েনি ওই মন্দিরে।
সম্প্রতি, সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়নে ওই এলাকায় যান বিজেপির বিধায়ক মনীষা অনুরাগী। স্কুলের বাচ্চাদের ইউনিফর্ম ও বই দেওয়া হয়। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে কর্মী সমর্থকদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। সমর্থকদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে প্রাচীন মন্দিরটির কথা বলেন। বিভিন্ন জনের কাছে নানাবিধ গল্প শুনে একবার মন্দিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মনীষা অনুরাগী। প্রার্থনার উদ্দেশ্যেই মন্দিরে যান তিনি। এলাকার মহিলারা প্রার্থনা করতে চাইলে মন্দিরের বাইরে থেকেই বিগ্রহকে প্রণতি জানান। কিন্তু বিধায়ক ভিতরে গিয়ে প্রার্থনা জানিয়ে আসেন। সেই সময় মন্দিরে ছিলেন না প্রধান পুরোহিত স্বামী দয়ানন্দ। তিনি ফেরার পরে এই খবর শুনে রেগে যান। বিধি মেনে মন্দির শুদ্ধিকরণের নির্দেশ দেন। সেই নিয়ম মেনেই গঙ্গাজলে মন্দির ধোয়ানোর পাশাপাশি এলাহাবাদের গঙ্গায় বিগ্রহকে স্নান করাতে পাঠানো হয়েছে।
তাঁর দাবি, ওই দিন মন্দিরে থাকলে এই অনাচার ঘটতে দিতেন না। তাই নিয়ম মেনে শুদ্ধিকরণের ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মন্দির কমিটির ক্রিয়া কলাপের খবর পৌঁছেছে বিধায়কের কাছে। তিনি বলেছেন, ‘না জেনেই মন্দিরে প্রবেশ করেছিলাম। এমন নিয়মের কথা উপস্থিত কেউই আমাকে জানায়নি। এমনকী, যখন মন্দিরে ঢুকছিলাম তখনও কেউ আমাকে বাধা দেননি। আসলে ওই এলাকায় একটা সরকারি প্রকল্পের কাজে যাই। প্রায় সবাই আমাকে মন্দিরটির প্রসঙ্গে বলেন। প্রাচীন মন্দিরটির জড়িয়ে রয়েছে মহাভারতের কথা। তা শুনেই বিগ্রহ দর্শনের ইচ্ছা হয়েছিল। তাই মন্দিরে প্রবেশ করি। তবে এই শুদ্ধিকরণ আসলে মহিলাদের অপমান করার নামান্তর। এই কাজ যাঁদের তাঁরা অজ্ঞতা থেকেই করছেন।’
বলা বাহুল্য, কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি তাঁর মতামত জানিয়েছেন। তিনি চান মহিলারও ওই মন্দিরে প্রবেশ করুন। এরপরেই ঋষি দ্রুম আশ্রম মন্দিরের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.