সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মজার ছলে শিশুদের খেলা শেখাতে গিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই ‘ছেলেখেলা’ শুরু করে দিল কেন্দ্র সরকার (Central Govt)! ২০২০ সালে দেশে চালু হয়েছে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP 2020)। আর শুরু থেকেই তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এবার স্কুলস্তরে খেলাধুলো নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হাসির খোরাক হয়ে উঠল। চারদিকে শুরু হল মশকরা। এখন থেকে স্কুলে স্কুলে শেখানো হবে ডাংগুলি, ঘুড়ি ওড়ানোর মতো দেশের ৭৫টি প্রাচীন খেলা। নতুন যে খেলাগুলিকে স্কুলস্তরে শেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে – এক্কা দোক্কা, চু কিতকিত, তালাচাবি (লক অ্যান্ড কি), আট্যাপাট্যা (দাড়িয়াবান্ধা), লাঙ্গরি (ল্যাংড়া)-র মতো খেলা!
জাতীয় শিক্ষানীতির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রের এই নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। একদিকে বার্মিংহ্যামে চলা কমনওয়েলথ গেমসে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন ক্রীড়াবিদরা। সেই আবহে দাঁড়িয়ে কেন স্কুলস্তরে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (Olympic Committee) অনুমোদিত খেলাগুলি শেখানোর দিকে জোর দেওয়া হল না? উঠছে এই প্রশ্ন। শুধু চলতি কমনওয়েলথই নয়, গত বছরের টোকিও অলিম্পিকেও তাক লাগানোর মতো সাফল্য পেয়েছেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা। বিশ্বের ক্রীড়া মানচিত্রে যখন নতুন করে দাগ কাটতে শুরু করছেন ভারতীয়রা, সেই সময় কেন আরও বেশি করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ধরনের অনুমোদিত খেলায় উৎসাহিত করা হচ্ছে না?
ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশের মত, এই খেলাগুলি অনুশীলন করলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন তারকা পাওয়ার পথ প্রশস্ত হত, তেমনই বিভিন্ন স্তরে চাকরি পেয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ আরও সুনিশ্চিত হতে পারত। অবশ্য কেন্দ্রের দাবি, যে খেলাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা পুরোপুরি দেশীয় খেলা। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসা দেশীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে। দেশীয় খেলার মাধ্যমে জ্ঞান ও একাগ্রতা বৃদ্ধি হবে। যার ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পড়াশোনা-সহ অন্যান্য কাজেও নিজেদের আরও ভালভাবে তৈরি করতে পারবে। খুদেদের মনে তৈরি হবে জাতীয়তাবাদ। ঠিক এই জায়গাতেই অনেকের প্রশ্ন, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে আবার কি নতুন করে জাতীয়তাবাদ তাস খেলা শুরু করল কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার?
শুধু দেশীয় খেলাধুলার অন্তর্ভুক্তি করানোই নয়। ঠিক হয়েছে, স্কুলে শেখানো হবে বেদ, বাস্তুশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, আয়ুষ, যোগের মতো বিষয়ও। এছাড়া কর ব্যবস্থাকে সহজভাবে বুঝতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গেমস ও পাজল তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, এভাবেই খেলার ছলে, অনেক সহজেই কঠিন কঠিন বিষয় বুঝে যেতে পারবে ভারতের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীরা। কেন্দ্রের দাবি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই সেই ৭৫টি ‘ভারতীয় খেলাধুলো’-র তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান কলেজ সিস্টেমস’ কর্মসূচির জাতীয় কো-অর্ডিনেটর গন্তি এস মূর্তি বলেন, “শুধুমাত্র স্কুলে ভারতীয় খেলাধুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য এই পদক্ষেপ করা হয়নি। স্কুলপর্যায়ে খেলাধুলোকে আরও বেশি মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে ব্যাডমিন্টন বা বাস্কেটবলের মতো জনপ্রিয় খেলাধুলোর পরিকাঠামো নেই। কিন্তু সেজন্য পড়ুয়াদের কেন (খেলাধুলোয়) অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না?”
বিষয়টি নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান কলেজ সিস্টেমস’ কর্মসূচির জাতীয় কো-অর্ডিনেটর গন্তি এস মূর্তি বলেন, “শুধুমাত্র স্কুলে ভারতীয় খেলাধুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য এই পদক্ষেপ নয়। স্কুল পর্যায়ে খেলাধুলোকে আরও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত। গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে ব্যাডমিন্টন বা বাস্কেটবলের মতো জনপ্রিয় খেলাধুলোর পরিকাঠামো নেই। কিন্তু সেজন্য পড়ুয়াদের কেন (খেলাধুলোয়) অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.