সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওঁরা স্বপ্ন দেখেছিল ভালবাসার পৃথিবীতে বাস করার। অপেক্ষাও করেছিল দীর্ঘদিন। কিশোর বয়সের সইদ আর সাজিয়ার প্রেম পরিণতিও পেল। তবে দীর্ঘস্থায়ী হল না। একটু একটু করে সাজানো সংসার লহমার ঝটকায় ভেঙে গেল বালির বাঁধের মতো। দিল্লির (Delhi) হিংসা তাদের কেড়ে নিল একে অপরের থেকে। অটোচালক সইদ মারা গেলেন দিল্লির “ধর্মযুদ্ধে”। তাঁর দেহের অপেক্ষায় বুলন্দশহরে বসে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সাজিয়া।
গত চার মাস আগে সাজিয়াকে বিয়ে করেন ২২ বছরের সইদ। কৈশোর থেকেই সাজিয়ার প্রতি ভালবাসা ছিল। সেই ভালবাসাই পরিণতি পেল চার মাস আগে। রুজি-রুটির টানে কিছুদিন আগেই উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বুলন্দশহর থেকে সইদ অটো চালাতে চলে এসেছিলেন দিল্লিতে। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সাজিয়াকেও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদবাগ বাজারের পাশে ভাড়া বাড়িতে তাদের লাল-নীল সংসারে দুজনেই অপেক্ষায় ছিলেন নতুন অতিথির। তবে সইদের সঙ্গে আর দেখা হল না তাঁর সন্তানের। “আব্বু” ডাক শোনার আগেই চিরঘুমে চলে গেলেন সইদ। দিল্লির হিংসায় সোমবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে জখম হন সইদ। বাড়িতে খবর যেতেই পরিবার লোক এসে সাজিয়াকে নিয়ে যান বুলন্দশহরে। এখন তিনি সেখানেই রয়েছেন।
শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন বছর কুড়ির তরুণী। কাঁদতে কাঁদতে সাজিয়া জানান, “ভাড়া থাকলে ও সময়ে খেতে আসতে পারত না। আমি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ফোন করে বলত, খা লে সাজিয়া। বাবু ভুখা হ্যায়।” সাজিয়া বলেন, “সইদ আহত হওয়ার খবর পেয়েই আমি গিয়েছিলাম জিটিবি হাসপাতালে। কিন্তু পুলিশ আমাকে দেখা করতে দেয়নি। ওই হাসপাতালেই অধিকাংশ আহত ভর্তি রয়েছেন। গোটা হাসপাতাল জুড়ে হাহাকার। হাসপাতালে ঢুকে দেখি কারওর মাথায় ব্যান্ডেজ, কারও হাত ভাঙা, কেউ বা কাতরাচ্ছেন বেডে শুয়ে। রবিবার রাতে শেষ একসঙ্গে আমরা ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম বাজারে। ও আমাকে সবুজ চুরি কিনে দিয়েছিল।”
সাজিয়ার হাতে এখনও সেই সবুজ চুরিগুলো ঝলমল করছে। কিন্তু অপেক্ষা শুধু চুরিগুলো ভেঙে ফেলার। মা হতে চলা তরুণীর আক্ষেপ, “বাচ্চাটা কোনওদিন ওর বাবাকে দেখতে পাবে না!” কথাগুলো বলতে গিয়ে মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন সাজিয়া। অনেক চেষ্টা করেও পরিবারের কেউ তাঁর মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না। শেষবারের মতো সইদকে দেখার অপেক্ষায় ছলছলে চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে গ্রামের বাড়িতে বসে সাজিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.