সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অমৃতসরে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হামলায় ব্যবহৃত মোটরবাইকটিও। রবিবার অমৃতসরের রাজাসানসি এলাকায় আধিওয়াল গ্রামের নিরঙ্কারি ভবনে হামলা চালায় বাইক আরোহী সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। তাদের ছোড়া গুলি ও গ্রেনেডে প্রাণ হারান তিনজন নিরঙ্কারি ভক্ত। এই ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই বড়সড় সাফল্য পেল পাঞ্জাব পুলিশ।
I’m happy to announce that police nabbed one of the two persons involved. 26-year-old Bikramjit Singh has been arrested. The other man will also be arrested soon. His name is Avtar Singh: Punjab CM on #Amritsar blast at Nirankari Mission congregation that claimed 3 lives pic.twitter.com/k0S52mpdKe
— ANI (@ANI) November 21, 2018
পুলিশের দাবি, গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে গোপন ডেরায় অভিযান চালিয়ে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে হামলাকারী জঙ্গিকে। তার নাম বিক্রমজিৎ সিং। বয়স ২৬। হামলায় ব্যবহার করা বাজাজ পালসার মোটরবাইকটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে রবিবার অমৃতসরে গ্রেনেড হামলার তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, হামলার ছক কষা হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোরে। এই নাশকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল জার্মানি ও কানাডায় বসবাসকারী খলিস্তান সমর্থক শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা আধিকারিক এই তথ্য জানিয়েছেন। ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে। আরও তথ্য ফাঁস হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। পাকিস্তানের হয়ে কারা গুপ্তচরবৃত্তি করছে, হামলার সঙ্গে জড়িতরা এখন কোথায় কীভাবে গা ঢাকা দিয়ে আছে তা জানার মরিয়া চেষ্টা করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে অমৃতসরে সংঘর্ষ বাধে শিখ ও নিরঙ্কারীদের মধ্যে৷ উগ্র শিখ নেতা ভিন্দ্রানওয়ালে ও ফৌজা সিংয়ের নেতৃত্বে নিরঙ্কারীদের উপর হামলা চালায় ‘অখণ্ড কীর্তনি জাঠা’ ও ‘দমদমি টাকসাল’-এর সদস্যরা৷ নিরঙ্কারীদের গুরু গুরবচন সিংয়ের উপর হামলা চালাতে গিয়ে তাঁর দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হয় ফৌজা সিং৷ কোনওমতে প্রাণ বাঁচিয়ে পালায় ভিন্দ্রানওয়ালে৷ মৃত্যু হয় ১৩ শিখ ও ৩ নিরঙ্কারীর৷ এই ঘটনার ফল খলিস্তান আন্দোলন ও ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ বলে মনে করেন অনেকেই৷ সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি৷ আজও নিরঙ্কারীদের পথভ্রষ্ট বলেই মনে করেন শিখ ধর্মের উগ্র অনুগামীরা৷ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে ফের শিখ-নিরঙ্কারী সংঘর্ষ ঘটাতেই অমৃতসরে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে আইএসআই৷ পাঞ্জাবে আটের দশকের রক্তাক্ত দিনগুলিকে ফিরিয়ে আনতে চায় পাকিস্তান৷
নিরাপত্তা আধিকারিকদের ধারণা, পাঞ্জাবে ফের একবার সন্ত্রাস ছড়ানোর লক্ষ্যেই এই হামলা করা হয়েছিল। ইসলামিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তানে তৈরি গ্রেনেড পাঞ্জাবে আনা হয়েছিল। পাক গুপ্তচর সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা না থাকলে সড়কপথে বা নদীপথে সীমান্ত পেরিয়ে গ্রেনেড ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। এরকমও হতে পারে, পাকিস্তান থেকে অন্য দেশ হয়ে ঘুরপথে ভারতের কোনও বন্দরে বা শহরে বাক্স বোঝাই অস্ত্র ও গ্রেনেড ঢুকেছিল। তারই কিছু বরাত ঢুকেছিল অমৃতসরে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তবে পাঞ্জাব পুলিশ নিশ্চিত, আইএসআই গোটা ব্যাপারটি দেখভাল করছে। পাঞ্জাবকে অশান্ত করতে, খলিস্তান আন্দোলনকে জাগিয়ে তুলতেই অমৃতসরে হামলা করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নিরঙ্কারি ভবনের বিস্ফোরণের বিভিন্ন কারণ খতিয়ে দেখা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গউবা, পাঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুরেশ অরোরা এবং গোয়েন্দা বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বিস্তারিত আলোচনার পর তাঁরা এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন যে, গোটা ঘটনার পিছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জইশ-ই-মহম্মদ নেটওয়ার্ক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আইএসআইয়ের উদ্দেশ্য, লোকসভা ভোটের আগে ভারতের শহরগুলিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, অমৃতসরের মতো বিচ্ছিন্নভাবে হলেও ছোটখাটো হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো।
[বড়সড় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল অমৃতসর, নিহত তিন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.