নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বিরোধীদের পালটা জবাব দিতে বিজেপি আবার তাদের দীর্ঘদিনের জাতীয়তাবাদের লাইনেই হাঁটা শুরু করল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার সিমলায় এক জনসভায় কংগ্রেসকে পাকিস্তানের প্রতি তাদের মনোভাব নিয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। সেই সঙ্গে আবার অনুপ্রবেশকারীদের হাতে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের প্রাণহানি থেকে শুরু করে উরি, পুলওয়ামার-র জঙ্গি হামলা, ভারতীয় বাহিনীর সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো বিষয়গুলি উঠে এসেছে তাঁর ভাষণে।
শাহর দাবি, পাকিস্তানের প্রতি কংগ্রেসের নরম মনোভাবের জন্য অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে ঢুকে সন্ত্রাস চালাতে পেরেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিজেপি জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করেই কংগ্রেস ও অন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কোণঠাসা করতে চাইছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সেই অনুপ্রবেশ আটকাতেই কড়া মনোভাব দেখাতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। সেই সঙ্গে শাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, “কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। কংগ্রেস ও তাদের সঙ্গীরা গুজব রটাচ্ছে যে, নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও ধারা এই আইনে নেই। এমনকী, তিনি সংখ্যালঘু হলেও নয়।”
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এদিন অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের প্রতি কংগ্রেসের মনোভাব নরম ছিল বলেই পাকিস্তান দেশে সন্ত্রাস ছড়ানো ও একের পর এক জঙ্গি হামলার মতো কাণ্ড ঘটাতে পেরেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সরকারের আমলে তাঁদের নরম মনোভাবের জন্যই পাকিস্তানের যা ইচ্ছে তাই করার বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। শাহর কথায়, “কংগ্রেস দশ বছর শাসন করেছে। ক্ষমতায় ছিল সোনিয়া গান্ধী-মনমোহন সিং সরকার। প্রতিদিন পাকিস্তান থেকে আলিয়া-মালিয়া-জামালিয়ারা আসত। আমাদের জওয়ানদের মাথা কেটে নিয়ে যেত। আর প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত বেরোত না।”
জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করার রণকৌশল বিজেপির এই প্রথম নয়। প্রথম মোদি সরকারের আমলেই তারা যে একই রাস্তা অবলম্বন করেছিল, এমনকী চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনেও এই অস্ত্র প্রয়োগ করেই তারা বিপুল জয় পেয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা এবং তার পরে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের ঘটনাকে লোকসভা নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হিসাবে তুলে ধরে বিরোধীদের মাত করেছিল বিজেপি, তাতে রাজনৈতিক মহলের দ্বিমত নেই। সেই বিষয়গুলিকেই শাহ এদিনও সুকৌশলে তুলে ধরে কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
শাহ শুধুমাত্র অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থাকেননি। কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর যে তফাত রয়েছে তা বোঝাতে এদিন তিনি সরাসরিই মনমোহনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তুলনাও টেনেছেন। তিনি বলেছেন, “ওরা সীমান্ত খুলে রাখত। যখন নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলেন পাকিস্তান ভাবল, এভাবেই চলবে। তারা বুঝতে পারেনি, এটা কংগ্রেস সরকার নয়, এটা বিজেপি সরকার। মৌনিবাবা মনমোহন সিং নন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির নরেন্দ্র মোদি। উরি, পুলওয়ামায় হামলা চালিয়ে তারা বিরাট বড় ভুল করেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.