সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রের মোদি সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনায় বারবার সরব হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। এবার ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানে মোদি সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধেও সরব হলেন তিনি। রামমন্দির ও সিএএ নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সেন বলেন, যে এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিকড় এবং বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক প্রকৃতিকে ধ্বংস করবে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ এবং নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের একত্রিত করার মাধ্যমে বিজেপি অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা সম্পর্কে তথাকথিত জনঅসন্তোষ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে সেন বলেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিকড় এবং বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক প্রকৃতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
তাঁর বক্তব্য, “ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান-সহ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তবে শুধুমাত্র হিন্দু পরিচয়ের উপর ফোকাস করা বেশিরভাগ হিন্দুদের পক্ষে সহজ হতে পারে, তবে এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ শিকড় এবং বহুসাংস্কৃতিক প্রকৃতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” বিরোধীরা বরাবরই কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে তারা দেশের সংবিধান বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধান পরিবর্তন করা সরকারের শ্রেণি অগ্রাধিকার এবং এর একক-ধর্মের ফোকাসের সঙ্গে এটিকে এক সারিতে ফেলতে পারে, তবে এতে ভারতের সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হবে না।
তবে এবারও কেন্দ্রের মোদি সরকারের আর্থিক নীতি নিয়ে অসন্তোষ ছিল অধ্যাপক সেনের কথায়। তিনি বলেন, “ভারতের শাসকদল কেবলমাত্র ধনীদের কথাই শোনে। তাদেরই গুরুত্ব দেয়। অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত, ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু পায় না যারা, লিঙ্গ বৈষম্যে যারা জর্জরিত সেই গরিবদের পাত্তা দেওয়া হয় না। তাদের কোনও উন্নয়ন হয় না।”
প্রসঙ্গত, বরাবরই এনডিএ সরকারের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন অমর্ত্য সেন। অশিক্ষার অন্ধকার, লিঙ্গবৈষম্যের জেরে দেশের গরিব মানুষের কোনও উন্নতি হয়নি বলেই এবারও তিনি মত ব্যক্ত করেন। লোকসভা নির্বাচনের মুখে ৯০ বছর বয়সি অর্থনীতিবিদকে এই সাক্ষাৎকারে পিটিআইয়ের তরফে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। সেখানে তিনি যেমন শাসক দলের নীতিগুলির সমালোচনা করেছেন, তেমনই বিরোধীদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে জানান, “কংগ্রেসের অনেক সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে যার প্রতিকার প্রয়োজন। দলের মহান অতীতে তাদের অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত।” সেই সঙ্গে লোকসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক সেন বলেন যে, “আমি ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। তবে দেশের গণতান্ত্রিক প্রকৃতিকে উন্নত করতে আমাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”
কংগ্রেস-সহ কয়েকটি বিরোধী দল জাত-ভিত্তিক জনগণনাকে নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু করেছে। কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ভোটে জিতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সারা দেশে জাত-ভিত্তিক জনগণনা করবে। এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য আরও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। জাতভিত্তিক জনগণনা বিবেচনা করার জন্য একটি ভালো আলোচনা হতে পারে, তবে ভারতের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হল উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য আরও বেশি ক্ষমতায়ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.