সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২৬-এর তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে তামিলনাড়ুতে ফের একজোট হয়েছে বিজেপি ও এআইডিএমকে। চব্বিশের লোকসভায় ব্যর্থ হওয়ার পর কার্যত মাথা নুইয়েই তামিলভূমে জোড়া পাতার শরণ নিতে হল বিজেপিকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, গোটা দেশে প্রবল প্রতাপশালী বিজেপি কেন দক্ষিণের রাজ্যে জোট শরিকের কাছে মাথা নোয়াল? রাজনৈতিক মহলের একাংশ, এর নেপথ্যে রাজ্যসভার অঙ্ক দেখছে। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এক দেশ-এক ভোট বিল পাশ করানোর অঙ্ক দেখছে।
এই মুহূর্তে এমনিতে রাজ্যসভায় সংখ্যাগুরু এনডিএ। কিন্তু এক দেশ এক ভোট বিলের ক্ষেত্রে সব এনডিএ শরিক সমর্থন করবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অমিত শাহদের মতে। তাছাড়া সংবিধান সংশোধনের যদি প্রশ্ন আসে, তাহলে আবার দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন পড়ে। সেটা জোগাড় করার চেষ্টাটাও এখন থেকেই শুরু করছে গেরুয়া শিবির।
এমনিতে রাজ্যসভার মোট আসন সংখ্যা ২৪৫। এই মুহূর্তে ৯টি আসন ফাঁকা। অর্থাৎ আপাতত ২৩৬ আসন পূর্ণ। সেই ২৩৬-এর মধ্যে এনডিএ শিবিরের দখলে রয়েছে ১১৯টি আসন। এআইএডিএমকের কাছে আপাতত ৪ জন সাংসদ আছেন। পিএমকের এক সাংসদ যোগ হলে সংখ্যাটা ৫ হতে পারে। আবার তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে এনডিএ শিবিরে সাংসদ সংখ্যা বেড়ে হবে ১২৪। সেই সঙ্গে ৬ জন মনোনীত এবং ১ জন নির্দল সাংসদের সমর্থন রয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। ফলে সংখ্যাটা চলে যাচ্ছে ১৩১-এ। আগামী দিনে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে। অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং ওড়িশার বিজেডি মিলিয়ে এই মুহূর্তে ১২ জন রাজ্যসভার সাংসদ রয়েছেন। আগামী দিনে এই রাজ্যগুলিতে বিজেপি এবং বিজেপির জোটসঙ্গী টিডিপির সাংসদ সংখ্যা বাড়বে। এক দেড় বছরের মধ্যে এই আসনগুলির সিংভাগ চলে যেতে পারে এনডিএর দখলে। তাছাড়া কাশ্মীরের ৪ জন মনোনীত সাংসদের আসন ফাঁকা। সেই আসনগুলিও চলে যাবে বিজেপির দখলে। সেই সঙ্গে যদি বিরোধী শিবিরকে কিছু সাংসদকে ভোটদানে বিরত করা গেলে এনডিএ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এক দেশ এক ভোটের মতো বিতর্কিত বিল পাশ করাতে সুবিধা হবে।
১৯৯৮ সালে জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এআইএডিএমকে দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি। সেই সময় থেকেই এনডিএ শরিক ছিল জয়ললিতার দল। তবে দীর্ঘ বছরের এই সম্পর্কে দাড়ি পড়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপির সঙ্গে জোটে ভাঙন ধরে এআইএডিএমকে’র। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকের সাধারণ সম্পাদক কে পালানিস্বামী জানান, “২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে একক দল হিসাবে লড়াই করা হবে।” এই ভাঙনের নেপথ্যে ছিলেন তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই। বিধানসভায় হারের পর তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিএন আন্নাদুরাই সম্পর্কে তাঁর একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য এই ভাঙনকে আরও চওড়া করে। জোট ভাঙার পর লোকসভায় চরম ব্যর্থ হয় গেরুয়া শিবির। এই পরিস্থিতিতে ‘আত্মহত্যা’র পথে না গিয়ে এআইএডিএমকে-এর সঙ্গে ফের জোট বেঁধে ২০২৬ এর নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.