স্টাফ রিপোর্টার: এক আইনজীবী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কর্মরত এক বিচারপতির বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত বিপথে চালিত করার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। বাষট্টি বছরের এক বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে তাঁদের দায়ের করা এফআইআরের (FIR) ভিত্তিতে শুরু হওয়া ওই পুলিশি তদন্ত নিয়ে এমনই অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির ডিভিশন বেঞ্চে ইতিমধ্যে মামলাটির একদফা শুনানি হয়েছে। পরবর্তী শুনানি হবে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। চলতি শুনানিপর্বে রাজ্য সরকারও পক্ষভুক্ত হয়েছে।
শীর্ষ আদালতে দায়ের করা ওই বৃদ্ধার আবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে বিধাননগর পুলিশে দু’দুটি এফআইআর দায়ের করেন তিনি। তার ভিত্তিতে একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই ‘কোনওরকম প্রভাবমুক্ত তদন্তে’র আর্জি জানিয়েছেন তিনি। আদালতে পেশ করা আবেদনে ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, যাঁর ভূমিকা রীতিমতো প্রশ্নের মুখে, সেই বিচারপতি এফআইআরের অভিযোগগুলি ‘কগনিজেবল’ হলেও এবং এই মামলা ধরনের ফৌজদারি মামলা সরাসরি তাঁর বিচার্য না হওয়া সত্ত্বেও তদন্তকারী এক অফিসারকে ডেকে রীতিমতো ধমকেছেন। এই হস্তক্ষেপের জেরেই পুলিশের বিনা বিরোধিতায় ধৃত ব্যক্তি মাত্র দু’দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি।
অভিযোগকারীদের তরফে দুই আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও নীনা নরিম্যান আদালতে সওয়াল করে বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক বিচারপতির হাতে পরিকল্পিত হেনস্তা ও তার জেরে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে আবেদনকারীরা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত প্রতিকার পেতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।’’
জানা গিয়েছে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বি পি গোপালিকা ও রাজ্য পুলিশের ডিজি (DG) মনোজ মালব্যকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই দু’টি এফআইআরের ভিত্তিতে তদন্তের ভার বিধাননগরের পুলিশের হাত থেকে সিআইডি নিজেদের হাতে নিয়েছে। জানা গিয়েছে, ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে তাঁর দায়ের করা অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত সেরে জানিয়ে দেয়, বিষয়গুলি দেওয়ানি বিবাদের পর্যায়ভুক্ত হওয়ায় পুলিশের হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার নেই। কিন্তু ওই সম্পত্তিতে ঢুকতে গিয়ে অভিযোগকারী বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে ভাইয়ের পরিবারের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় গোটা বিষয়টি গুরুতর দিকে মোড় নেয়। এরই জেরে গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগ তুলে পুলিশে একাধিক মামলা ও পালটা একটি মামলা দায়ের হয়। সেগুলিরই মধ্যে মহিলাকে নিগ্রহ সংক্রান্ত একটিতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেই গ্রেপ্তারের পরই সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ অফিসারকে ওই বিচারপতির চেম্বারে তলব করা হয়। শীর্ষ আদালতে চলতি মাসে শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে চাওয়া হয়নি। বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.