সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গতানুতিকতা ভাঙলেন বিহারের দলিত মহিলারা। তৈরি করলেন মিউজিক্যাল ব্যান্ড। নাম ‘সরগম ব্যান্ড’। বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে তাঁরা পারফর্ম করেন।
দলের সদস্য সংখ্যা ১০। প্রত্যেকেরই বয়স ত্রিশোর্ধ্ব। পাটনার দানাপুর মহকুমার ধিবড়া গ্রামে থাকেন তাঁরা। ‘নারী গুঞ্জন’ এনজিও-র মালকিন শুধা ভার্গেস এই ব্যান্ডটি তৈরি করেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ব্যান্ডের আইডিয়া তাঁরা মাথায় আসে ২০১৬ সালে। তখন তিনি রবিদাস সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য কাজ করতেন। সেখানকার মহিলারা ছিল শ্রমিক। তাদের সামাজিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য কিছু করতে চাইছিলেন তিনি। সেখান থেকেই এই ভাবনার সূত্রপাত।
[ এবার টোল প্লাজায় গেরুয়া রঙের পোঁচ, প্রশ্নের মুখে যোগী প্রশাসন ]
শুধা ভার্গেসকে গ্রামের সবাই বলে শুধা দিদি। তাঁর জন্ম কেরলে। পাঁচ দশক আগে তিনি বিহারে আসেন। তখন থেকেই সমাজকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সমাজের নিম্নস্তরের মহিলাদের তিনি পড়া, লেখা ও হাতের কাজ শেখাতেন। এছাড়া শারীরিক নির্যাতন ও হিংসার মতো সমস্যাতেও মহিলাদের তিনি আইনি সাহায্য দিতেন।
তিনি জানিয়েছেন, ধিবড়ির মহিলাদের যখন তিনি ব্যান্ডের কথা বলেন, তারা বিশ্বাসই করেনি। বলেছিল, এটা অস্বাভাবিক। কেউ মহিলা সদস্যে পূর্ণ ব্যান্ডের গান শুনবে না। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। মহিলাদের তিনি বোঝান। ফলে তারাও সাহস পায়। বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে তৈরি হয়। তারপর শুরু হয় আয়োজন। মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট কেনা হয়। শেখানোর জন্য প্রশিক্ষকও রাখা হয়।
[ ভাইকে গুলির ঘটনায় সরাসরি বিজেপি সাংসদের দিকে আঙুল কাফিল খানের ]
পাটনার এক শিক্ষক আদিত্য গুঞ্জন কুমার আড়ালে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছাত্রী সবিতা তাঁকে আড়ালে থাকতে দেননি। সর্বসমক্ষে নিয়ে এসেছেন গুরুর শিক্ষা। ব্যান্ডের দলের তিনিই মাথা। তিনি জানিয়েছেন, শুধা ও আদিত্য তাঁদের জীবন বদলে দিয়েছেন। আদিত্য ছ’মাস ধরে তাঁদের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এর জন্য তিনি কোনও পারিশ্রমিক নেননি। শুধু তাঁদের রান্না করা খাবার খেতেন। সেটিই ছিল তাঁর গুরুদক্ষিণা।
যাত্রা যে সহজ ছিল না, তা জানিয়েছেন সবিতা। ওই মহিলাদের স্বামীরা তাঁদের উপহাস করতেন। পুরুষ আত্মীয় ও প্রতিবেশীরাও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। এসবের মধ্যে থেকে বেরিয়ে ব্যান্ডটি গড়ে তুলেছেন তাঁরা। ক্লায়েন্ট খুঁজতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাঁদের। প্রথমদিকে তাদের চার্জ ছিল খব কম। প্রতি পারফর্ম্যান্সে ২৫০ টাকা। তাঁদের প্রথম পারফর্ম্যান্সটি ছিল দানাপুরে। তাঁদের কথা শুনে প্রথমে মানুষ কৌতূহলী হয়েছিল। তারপর এখন ব্যান্ডের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। পাটনা থেকেও ডাক আসে। গত বছর বিয়ের মরশুমে গুরগাঁও থেকেও ডাক এসেছিল।
[ জঙ্গিদের হাতে ‘স্টিল কোর’ বুলেট, চিন্তিত নিরাপত্তা বাহিনী ]
ব্যান্ডের জন্য এখন তাঁদের দিল্লিও ছুটতে হয়। চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে পারিশ্রমিকও বাড়িয়েছেন তাঁরা। এখন প্রতি পারফর্ম্যান্সের জন্য ব্যান্ডে এক এক জন সদস্য নেন এক হাজার টাকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.