নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(CAA)’র বিরোধিতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। তার মধ্যে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যেই এক শিশু-সহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিপথে চালনা করছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। তাই সরকারি প্রচেষ্টার বাইরে, বিরোধীদের দেশজুড়ে আন্দোলনের পালটা হিসেবে এবার রাস্তায় নামতে চলেছে বিজেপিও। দেশের প্রতিটি রাজ্যে জনসভা, মিটিং, মিছিল, সাংবাদিক বৈঠকের পাশাপাশি তিন কোটিরও বেশি পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিএএ নিয়ে বোঝানোর জন্য ১০দিনব্যাপী ‘জনসম্পর্ক অভিযান’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তারা। আজ দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে জনসভার মাধ্যমে সেই কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আর সেই উপলক্ষে নিরাপত্তার কড়া চাদরে ঢেকেছে সভাস্থল। এসপিজি ও দিল্লি পুলিশের সঙ্গে বিষয়টির নজরদারি করছে অন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী-সহ প্রায় পুরো কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকেই আজ দেখা যাবে রামলীলায়। তাই নিরাপত্তা যথেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকদিন আগে গোয়েন্দারা জানান যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এই সভাতেই প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলা ছক করছে। যার মূল দায়িত্বে রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ। তাই নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও সমঝোতা করতে চাইছেন না কেউ।
সিএএ নিয়ে দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে সবচেয়ে বেশি। এতদিন পর্যন্ত সিএএ’র প্রতিবাদ আন্দোলনের দিকে নজর রাখছিল বিজেপি। এই বিষয় নিয়ে প্রথম থেকেই ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি নিয়েই চলতে হবে বলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে রাজ্যের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে তা বুঝতে পেরে এবার পালটা মাঠে নামতে চলেছে তারা। দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ আন্দোলনের ঝড় উঠেছে তা থামানোর জন্য রণকৌশলও ঠিক করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। শনিবার দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে এবিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেছেন বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নাড্ডা।
বিজেপির অভিযোগ, সিএএ নিয়ে বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস মানুষকে বিপথে পরিচালনা করছে। এই কথা প্রচারের পাশাপাশি তুলে ধরা হবে যে এর সঙ্গে ভারতের নাগরিকদের কোনও সম্পর্ক নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে এই নিয়ে বিজেপি প্রচারও শুরু করেছে। কীভাবে মানুষকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা যায় তার কৌশল নিয়ে শনিবার বিজেপি নেতৃত্ব বৈঠক করে। সিএএ নিয়ে প্রচারের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসির কাজ শুরু করার জমি তৈরিও সমানতালে চলবে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
সিএএ এবং এনআরসি যে ভিন্ন বিষয় সেকথা মানুষকে বোঝানোই এখন দলের কাছে মুখ্য কাজ। গতকালের বৈঠক থেকে মাঝপথে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে একথাই জানান দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব। সিএএ নিয়ে কংগ্রেস ও বেশ কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল মিথ্যা প্রচার করছে বলে অভিযোগ করে ভূপেন্দ্র জানান, এর জবাব দেওয়ার জন্য তাঁরাও পালটা মাঠে নামছেন। যাদব বলেছেন, ‘সিএএ নিয়ে বিরোধীরা যে মিথ্যের রাজনীতি করছে দেশজুড়ে তার জবাব দেওয়া হবে। আগামী দশদিন ধরে লাগাতার জনসম্পর্ক অভিযান চলবে। সিএএ’র সত্যতা কী তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হবে। তিন কোটির বেশি পরিবারের সঙ্গে কর্মীরা কথা বলবেন। জনসভা, মিছিলের পাশাপাশি দেশজুড়ে ২৫০টি সাংবাদিক বৈঠকও করা হবে। আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমগুলিতে সিএএ আসলে কী তা প্রচার করা হবে। জনতার সঙ্গে কথা বলে আমরা তাঁদের বিভ্রান্তি দূর করব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.