সোম রায়, পুলওয়ামা: মাস তিনেক আগে শিরোনামে এসেছে এই গ্রাম। এখানকার ছেলে আদিল আহমেদ দার, যেন গোটা ভারতবাসীর কাছে বিভীষিকার নাম হয়ে গিয়েছিল। পুলওয়ামা হামলার নেপথ্যে আদিলের লক্ষ্য ছিল, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আঘাত হানা। গ্রামের ছেলের সেই লক্ষ্যে আজও অবিচল আদিলের গ্রাম গান্ডিবাগ। কাকাপোরা এলাকার ভোটের চিত্রটা অন্তত সেকথাই বলছে।
গোটা দেশ যখন গণতন্ত্রের উৎসবে মেতে, তখন পুলওয়ামার গান্ডিবাগ যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই। গোটা গ্রামে ভোটের আমেজ তো দূর কি বাত, রেশমাত্র নেই। ভোট চলছে, হয়তো জানেনই না অনেকে। ভোটের দিন সকাল থেকে বুথের সামনে লম্বা লাইন থাকবে। প্রথম ভোটার থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধরাও ভোট দিতে আসবেন। উৎসবের মেজাজে ভোট দেবেন, এসবই দেখতে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু এ গ্রামে সেসব কিছুই নেই। ভোটকেন্দ্র যেন খাঁ খাঁ করছে। জনশূন্য মরুভূমির মতো।
কাকাপোরা গভর্নমেন্ট বয়েজ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। মোট ১৩ টি বুথের ভোট হয় এখানে। ভোটারের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ হাজার হবে। সকাল থেকে এই স্কুলে মোট কতজন ভোট দিতে এসেছেন শুনলে আপনারও চোখ কপালে উঠবে। মোট ১৩ টা বুথের মধ্যে দশটিতে একটি ভোটও পড়েনি। বাকি তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১ জন করে। আসলে, আদিলের গ্রাম এবং সংলগ্ন পুরো এলাকাটাই ভোট বয়কট করেছে। এমনকী বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করারও চেষ্টা করছে তাঁরা। গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গান্ডিবাগ থেকে বেরিয়ে পুলওয়ামার অন্য প্রান্তগুলিতেও ভোট পড়ার হার এমনই। কোথায় দশটা, কোথাও ৪০টা। বলা ভাল নেহাতই নগণ্য।
কিন্তু, কেন এমন ভোটবিমুখতা। কারণটা হয়তো গণতন্ত্রের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। কাকাপোরা হোক বা গোটা পুলওয়ামা। এখানকার বাসিন্দারা ভারতীয় গণতন্ত্রের কাঠামোয় বিশ্বাসই করে না। ভারতীয় সেনার উপরেও রয়েছে প্রবল আক্রোশ। সেকারণেই হয়তো গোটা অনন্তনাগ লোকসভা কেন্দ্রতেই ভোটের হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে একটিমাত্র কেন্দ্রের জন্য তিন দফায় ভোট করানো হচ্ছে। ২৩ এপ্রিল ভোট ছিল অনন্তনাগ জেলায়। কুলগাম জেলায় ভোট ছিল ২৯ এপ্রিল। সোমবার ভোট হল পুলওয়ামা আর সোপিয়ান জেলায়। ভোট হল বলা ভুল, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেলেন, নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন ঠিক উৎসবের আকার নিল না কাকাপোরায়, বলা ভাল অনন্তনাগে। তবে দিনভর একাধিক হামলায় এদিনও কেঁপে উঠেছে উপত্যকার মাটি৷ গত ৮ ঘণ্টায় বিক্ষিপ্তভাবে ৪ বার পেট্রোল বোমা, গ্রেনেড হামলার খবর মিলেছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.