সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক বছরের উপর তিনি জেলবন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সেই অখিল গগৈ (Akhil Gogoi) এবার অসম বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ‘চরিত্র’ হয়ে উঠতে পারেন। সূত্রের খবর, শিবসাগর আসন থেকে লড়াইয়ে নামতে পারেন তিনি।
২০১৯ সালে অসমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রচারের আলোকে আসেন অখিল। তাঁর নেতৃত্বের কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)-র সংগঠিত বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সেই গগৈ তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল গড়েছেন– রাইজোর দল। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় জনগণের দল। কেএমএসএস ছাড়াও আরও ৭০টি ছোট-বড় জাতিগত ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাইজোর দলে মিশে গিয়েছে।
অখিল জেলে থাকলেও তাঁর দল কিন্তু সক্রিয়। অসম বিধানসভা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে রাইজোর দল। আরেক আঞ্চলিক দল এজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে তারা। এই এজেপি-রও গঠনের ভিত্তি হল সিএএ। তবে রাইজোর দল বা এজেপি, দুই দলের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে হলেও তারা কেউ কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের জোটে নেই। মঙ্গলবারই অখিল জেল থেকে লেখা একটি চিঠিতে বলেছেন, আঞ্চলিক দলগুলির কখনওই ‘মহাজোটে’ যাওয়া উচিত নয়। কারণ অসমের বাংলা বংশোদ্ভূত মুসলিম সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন পেয়ে থাকা সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বের এআইইউডিএফ এই জোটের অংশ। তাঁর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ। তাদের কথা, অখিল গগৈ এমন একটি উদাহরণ দিয়ে দেখাক, যেখানে এআইইউডিএফ ‘সাম্প্রদায়িক’ মন্তব্য করেছে।
এবার অসম ভোটে সবচেয়ে বড় ইস্যু সিএএ-এনআরসি। এমনকী বিজেপি নেতারাও মানছেন, উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে তাঁদের পক্ষে ক্ষমতায় ফেরা খুব সহজ হবে না। একদিকে, বিজেপি যেখানে সিএএ নিয়ে অসমবাসীকে আশ্বস্ত করছে, সেখানে বিরোধী কংগ্রেস-এআইইউডিএফ জোট কিন্তু সেই ইস্যুর বিরোধিতা করে ভোট-ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে। সেই ইস্যু রাইজোর দলেরও। কিন্তু এখন, সাম্প্রতিক রাজ্য-রাজনীতির পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছে সিএএ-বিরোধী, বলা ভাল বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হলে আখেরে লাভ হবে বিজেপিরই।
আশ্চর্যের বিষয় হল, গ্রেপ্তারের সময় অখিল গগৈকে ‘মাওবাদী’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। এনআইএ তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র ধারায় ‘দেশদ্রোহিতা’, ‘মানুষে মানুষে শত্রুতা তৈরির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। ‘১৯-এর ডিসেম্বরেও তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দারা সাম্যবাদ, মার্কসবাদ, সমাজবাদ এবং মাও জে দং ও লেনিন সম্পর্কিত বই বাজেয়াপ্ত করে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগে অসমে কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারের আমলেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন অখিল গগৈ। সেই সময় তাঁর নেতৃত্বে কেএমএসএস অসমে জমি সমস্যা ও বড় বাঁধ প্রকল্প নিয়ে আন্দোলন করছিল। ২০১৭ থেকে গগৈকে অসম পুলিশ দু’বার গ্রেপ্তার করেছে দেশদ্রোহীতার মামলায়। দু’বারই সিএএ-র বিরুদ্ধে ভাষণ দেওয়ার জন্য। পুলিশের অভিযোগ, তাঁর ভাষণ ছিল প্ররোচনামূলক, যা অশান্তি সৃষ্টি করতে পারত। অবশ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এনআইএ আদালতে একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে অখিল বলেছিলেন, তাঁকে মাওবাদী দেগে দেওয়া ভুল। কারণ, তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.