ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের এবিভিপি-র তাণ্ডব। দু’পক্ষের ধুন্ধুমারে মাথা ফেটে গেল ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে এইমসহাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভরতি করা হয়েছে। সূত্রের খবর কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই তিনি। মেয়ের এই পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগে ঐশীর দুর্গাপুরের পরিবার। ঘটনার দায় পুরোপুরি বিজেপি ছাত্র সংগঠনের উপরেই চাপিয়েছে এসএফআই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। ‘বহিরাগত’রা হস্টেলে ঢুকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই মুহূর্তে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ব়্যাফ ঢুকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এসএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস স্পষ্ট অভিযোগ করে বলেন, ”শনিবার রাত থেকে ক্যাম্পাসে বাইরে থেকে এবিভিপি সদস্যরা ঢুকছে। কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়েই তাঁরা ঢুকতে পারছে ক্যাম্পাসে। তাদের সকলের মুখ ঢাকা। তারপর রাতের অন্ধকারে হস্টেল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে মারধর চলছে। আজ সন্ধেবেলা, ছ’টার কিছু পরে ফের হস্টেলে ঢুকে এমন তাণ্ডব শুরু করে তারা। ঐশীর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়। দেওয়ালে প্রবল জোরে মাথা ঠুকে দেয়। তার জন্যেই ওর মাথা এভাবে ফেটে গিয়েছে।” ঐশী নিজেও সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় দিতে গিয়ে কোনওক্রমে বলতে পেরেছেন যে কী নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছেন ভূগোলের অধ্যাপিকা সুচরিতা সেনও। এর প্রতিবাদে সোমবার প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এসএফআই নেতৃত্ব।
অভিযোগ আরও আছে। জেএনইউতে মহিলাদের হস্টেলে ঢুকে যারা মারধর করেছে, তারা প্রত্যেকেই পুরুষ। ফলে বিষয়টি মহিলাদের উপর নিগ্রহের অভিযোগও উঠছে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, দিল্লির বুকে বিশেষত জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের দখল নেওয়ায় যেভাবে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে চলে এসেছেন বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা, তাদের শক্তিকে ভয় পেয়েই এমন ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা চালাচ্ছে। পুলিশের উদাসীনতায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই ধরনায় বসেছেন এসএফআই সমর্থিত পড়ুয়ারা। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবিভিপি। তাঁদের পালটা দাবি, রাতের অন্ধকারে এভাবে হামলা করা তাদের কাজ নয়।
এদিকে, দুর্গাপুরে বসে এই খবর শুনে চরম উদ্বিগ্ন ঐশী ঘোষের বাবা, মা।ঐশীর বাবা দেবাশিস ঘোষের কথায়, “ওর সহপাঠীদের কাছে শুনলাম, ও এভিবিপির কর্মীদের দ্বারা নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। খবর শুনে আমরা দুর্গাপুরে বসে অত্যন্ত উৎকন্ঠায় আছি। শুনেছি, মাথায় পাঁচটি সেলাই হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও জেএনইউ কর্তৃপক্ষের মদতে এই আক্রমণ হয়েছে। তীব্র নিন্দা করছি এই ঘটনার। আগামী এক দু’দিনের মধ্যে আমি যাওয়ার চেষ্টা করছি।” মা শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন, “এইভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ মানতে পারছি না। নিজের মেয়ে বলে নয়, কোনও মহিলাই ওখানে সুরক্ষিত নন।”
ঘটনার পর দিল্লি পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন জেএনইউ-এর বামপন্থী সমর্থিত পড়ুয়ারা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.