সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেই আবেদন জানাতে চলেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (এআইএমপএলবি)। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অযোধ্যা রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করতে চলেছে এআইএমপিএলবি।
মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আইনজীবী জিলানির দাবি, রায়ের টেকনিক্যাল দিকগুলিতে বিভ্রান্তি রয়েছে। এই বিভ্রান্তিকেই হাতিয়ার করেই তাঁরা যুক্তি সাজাচ্ছেন। কি সেই যুক্তি? বাবরি মসজিদে রামের মূর্তি বসানো নিয়ে এফআইআর দায়ের হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। সেই এফআইআরেও মুর্তি যে বেআইনি ভাবে বসানো হয়েছিল, তার প্রমাণ রয়েছে। এমনটাই দাবি জিলানির। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক রায়ে মেনে নিয়েছে, মসজিদটি পরিত্যক্ত ছিল না। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সেখানে নমাজ পড়া হত। শীর্ষ আদালত এও মেনে নিয়েছে, মূর্তিটি জোর করে এবং বেআইনিভাবে বসানো হয়েছিল।’ তাহলে মূর্তি বসানোই যেখানে ‘বেআইনি’, সেই মূর্তি কি দেবতার মর্যাদা পেতে পারে? প্রশ্ন তুলেছেন জিলানি।
জিলানি বলেন, ‘হিন্দু রীতি অনুযায়ী, কোনও মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এবং মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠা না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মূর্তি শুধুই ‘মূর্তি’। তাতে কোনও প্রাণ থাকে না। এই অবস্থায় বাবরি মসজিদে জোর করে বসানো রামলালর মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়নি। তা দোবত্বের পর্যায়ে উন্নীতও হয়নি। তাই সেই মূর্তি দেবতা নয়। তাছাড়া হিন্দু ধর্মে বলা আছে, কোনও দেবতা অন্যের জমি জবরদখল করতে পারবেন না। দেবতার নামে জবরদখল করা জমির মালিকানা দেবতা দাবি করতে পারেন না।
এই সব যুক্তি দিয়ে হিন্দু শাস্ত্রের ‘দেবত্ব’-এর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা আদালতে টেনে আনতে চাইছে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড। জিলানির প্রশ্ন, মূর্তি বসানোই যেখানে ‘বেআইনি’, সেই মূর্তি কি দেবতার মর্যাদা পেতে পারে? জিলানি বলেন, ‘১৮৮৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত হিন্দু রীতি-নীতি মেনে রামলালার মূর্তি পুজো হত বাবরি মসজিদ সংলগ্ন ‘রাম চবুতরা’তে। আমরা তার বিরোধিতা করিনি। কিন্তু ওই মূর্তি বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নীচে বসানো হয় এবং তাতে মূর্তির পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও সেটা মেনে নিয়েছে। অন্যের জমিতে জোর করে বসে কোনও মূর্তি দেবতা হতে পারে না।’
৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায়ে বলেছিল, অযোধ্যার মূল বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরি করা যাবে। মসজিদ তৈরির জন্য অযোধ্যাতেই পাঁচ একর জমি দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের এই রায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি মেনে নেয়। তারা রায় চ্যালেঞ্জ করবে না বলে জানায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টেই ফের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে চলেছে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.