সোমনাথ রায়, পহেলগাঁও: পহেলগাঁও বাজার থেকে লিডার নদীর গতিপথ ধরে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যাওয়ার পর আসে নাগবাল গ্রাম। পাহাড়ের বুকে ছোট্ট গ্রামটি হঠাৎ করেই খবরের শিরোনামে। সেখানে পৌঁছে দেখা মিলল এক তলা ছোট্ট ঘরের বাড়ি। পলেস্তরা না হওয়া কোনওমতে ইঁটের গাথনির উপর টিনের চালের কামরা। যার বাইরে অস্থায়ী ছাউনি করে গিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এখানে যে হঠাৎ করেই যাতায়াত শুরু করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন নেতা।
এই বাড়ি আদিল শাহের। এই বাড়ি বৈসরনে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিরস্ত্র, শহিদ সহিসের বাড়ি। তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে সবথেকে বড় ছিলেন আদিল। বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা, অবিবাহিত বোনদের বিয়ে, এত বড় সংসার চালানো সবকিছুতে বৃদ্ধ বাবা সৈয়দ হায়দার শাহের প্রধান ভরসা। অথচ সে-ই আজ নেই। ছোট থেকে বুকে করে যাঁকে বড় করেছিলেন, সেই আদিলকে শেষবার যখন দেখেছিলেন তখন বুকে তিনটি, গলায় একটি বুলেটের ক্ষত। ডানহাতে ফোস্কার ছাপ।
ছলছল চোখে বছর সত্তরের হায়দার বলছিলেন, “ওই হাতটাই বলে দিচ্ছিল আমার ছেলে কতখানি সাহসিকতা দেখিয়েছে। ওটা ওই জানোয়ারগুলোর বন্দুকের গরম নলের দাগ।” মঙ্গলবার বৈসরণে হয়ে যাওয়া নারকীয় ঘটনার পর দেশজুড়ে নতুন করে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক উসকানি। গত ক’দিনে আর পাঁচজন কাশ্মীরির থেকে শোনার কথার মতো হায়দারও বলছিলেন, এর সঙ্গে সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নেই। গোটাটাই মানবতা বনাম সাম্প্রদায়িকতা।
তাই তো সরকারের থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ চান না। চান অপরাধীদের শাস্তি। বলছিলেন, “অর্থ তো আল্লাহ দিয়েই দেবে। ওই কীটগুলোকে চরমতম শাস্তি দেওয়া হোক।” মাত্র ছ’দিন আগে নতুন জীবন শুরু করেও সব শেষ হয়ে যাওয়া নৌসেনা বিনয়ের স্ত্রী হিমাংশী-সহ আহত, নিহত, স্বজনহারানো প্রত্যেককে সমবেদনা জানিয়ে পুত্র শোক বুকে নিয়েও তাই দিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.