Advertisement
Advertisement

Breaking News

Abhishek Banerjee

নিখুঁত তথ্য, চোখা আক্রমণ আর শ্লেষের মিশেল, সুবক্তা অভিষেকের প্রতিষ্ঠা লোকসভায়!

যুক্তির ঠাসবুনটে বার বার ফালাফালা করলেন শাসক শিবিরকে।

Abhishek Banerjee: Politicians mesmerized with the TMC leader's speech in LS
Published by: Paramita Paul
  • Posted:July 25, 2024 9:02 am
  • Updated:July 26, 2024 1:11 pm

বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: একের পর এক নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জিতে রাজ্য-রাজনীতির প্রথম সারির মুখ হিসাবে নিজেকে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সারা বছর জনসংযোগ বজায় রেখে নিজের কেন্দ্রকে চেনেন হাতের তালুর মতো। এহেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বরাবরের সুবক্তা, যার পরিচয় মিলেছে রাজ্য-রাজনীতিতে। আর বুধবার লোকসভায় তাঁর ভাষণে বাংলা থেকে আরও এক সুবক্তার প্রতিষ্ঠা দেখল গোটা দেশ। দেশবাসীর সামনে দাপুটে, আক্রমণাত্মক বক্তা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরলেন অভিষেক। আগামিদিনেও যে তিনি সংসদে আজকের মতোই, হয়তো তার চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক মেজাজে, শাসক শিবিরের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেবেন, অভিষেক তার প্রমাণ দিলেন ৫০ মিনিটেরও বেশি ভাষণে।

চোস্ত, ঝকঝকে ইংরেজির সঙ্গে মাঝেমধ্যেই হিন্দির মিশেলে, কটাক্ষ, বিদ্রুপে জর্জরিত করলেন বিজেপি, শাসক শিবিরকে। কখনও ‘ওয়াক্ত বদল গয়া’, কখনও ‘চিয়ারলিডার্স’ বলার পাশাপাশি ‘বেঞ্চ বজানেওয়ালা কম পড় গয়া’ বলে শাসক শিবিরকে কটাক্ষ করলেন, কখনও বা ইংরেজি বর্ণমালা থেকে ‘ইউ’-এর উল্লেখ করে বেকারির মতো গভীর সমস্যা তুলে আনলেন ভাষণে। অভিষেকের আজকের ভাষণে এ রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা, বিমাতৃসুলভ মনোভাবের উদাহরণ তো ছিলই। তাছাড়াও গতকালের বাজেটে গদি বাঁচানোর স্বার্থে দুই শরিক দল শাসিত রাজ্যের জন্য কল্পতরু হয়ে দু-হাত উপুড় করে অর্থ বরাদ্দ ঘোষণা-সহ একাধিক জাতীয় ইস্যুতেও আগ্রাসী মেজাজে সরব হন অভিষেক। মুগ্ধ হয়ে তাঁর ভাষণ শোনে গোটা সংসদ। বারবার তাঁ বাধা দিতে গিয়েও নিরস্ত হতে হয় শাসক শিবিরকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সংসদে দাঁড়িয়ে ‘স্টুপিড’ কটাক্ষ, কংগ্রেস সাংসদকে নিশানা করে বিতর্কে অভিজিৎ]

বাংলার সাংসদ হিসাবে সব সময়ই গোটা দেশের নজর কাড়তেন মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়। তাঁর আগেও বাংলা অনেক সুবক্তা সাংসদকে পেয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়রা উদাহরণ। তিনজনই অবশ‌্য প্রয়াত। দিল্লিতে কংগ্রেসি রাজনীতি থেকে রাষ্ট্রপতি পদ-সহ নানা সময় মন্ত্রিত্বের গুরুদায়িত্ব সামলানো প্রণববাবুর ভাষণে ফুটে উঠত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর গভীর দখল, পাণ্ডিত্য, বৈদগ্ধ্যের ছাপ। কিন্তু প্রণববাবুর ভাষণে আগ্রাসী মেজাজ পাওয়া যেত না। ইংরেজিও বলতেন সাদামাটা ঢঙে। প্রিয়রঞ্জন ছিলেন দুর্দান্ত বক্তা, শ্লেষ-বিদ্রুপে মন জয় করতেন শ্রোতার। যে কোনও বিষয়ে অনর্গল বলে যেতে পারতেন স্বকীয় মেজাজে। দুঁদে আইনজীবী সোমনাথবাবুও সাহেবি উচ্চারণে ইংরেজি বলতেন, সংসদীয় রীতিনীতির খুঁটিনাটি থাকত নখদর্পণে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে আক্রমণে ঝাঁজ থাকত না ভাষণে। হালে সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্রদের নাম উল্লেখ করতেই হয়। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ গত সংসদে বারবার নজর কেড়েছেন, শাসক শিবিরের রোষানলে পড়েছেন আদানি-সহ নানা জাতীয় ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণাত্মক মেজাজে বেআব্রু করে দিয়েছেন বার বার। হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে তাঁকে শেষ পর্যন্ত সংসদ থেকে বহিষ্কার করে শাসক শিবির। কিন্তু অভিষেক আজকের ভাষণে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভূক্ত করা হোক’, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি সুকান্তর]

বুধবার তিনি কাগজে নোট লিখে নিয়ে এসেছিলেন। সব ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট তথ্য-সহ পুরোপুরি তৈরি ছিলেন, যা বারবার ফুটে উঠেছে ভাষণে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়টাই বলে গেলেন কাগজে চোখ না রেখেই। সরাসরি স্পিকার, শাসকদলের নেতাদের চোখে চোখ রেখেই ভাষণ চালিয়ে গেলেন। বেশ কয়েক বছর আগে পথদুর্ঘটনায় চোখে আঘাত পান অভিষেক, যা নিয়ে আজও সমস্যায় ভুগছেন। বেশিক্ষণ কিছু পড়তে কষ্ট হয়। ফলে টানা হোমওয়ার্ক করার সমস‌্যা রয়েছে তাঁর। সেই সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে অভিষেক যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই এদিন সংসদে এসেছিলেন, তা বুঝিয়ে দিলেন। যুক্তির ঠাসবুনটে বারবার ফালাফালা করলেন শাসক শিবিরকে। এদিন স্পষ্ট হল, আগামিদিনে যতবার তিনি বলবেন, রাতের ঘুম কেড়ে নেবেন শাসক শিবিরের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ