সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ বদলে হয়েছে ‘জো হামারা সাথ, হম উনকে সাথ’। স্পষ্ট ভাষায় এভাবেই বিজেপির নীতি স্পষ্ট করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃতীয় মোদি সরকারের পুর্ণাঙ্গ বাজেটকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। সুর চড়িয়ে জানালেন, শরিক দলগুলিকে তুষ্ট করতেই এই বাজেট (Budget 2024) পেশ করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই বাজেট আসলে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা।
নির্মলার পেশ করা বাজেটে সার্বিকভাবে বিরাট কোনও ঘোষণা না করলেও এনডিএর দুই প্রধান শরিকদল টিডিপি (TDP) এবং জেডিইউ (JDU) শাসিত দুই রাজ্যের ঝুলি ভরে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিরাট বিরাট আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে দুই রাজ্যের জন্য। এই ইস্যুতেই দেশের অবিজেপি রাজ্যগুলির প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, ‘এই বাজেটে বেছে বেছে ৩টি রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তা হল তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্নাটক।’ অভিষেকের কথায় এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, “এই তিন রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে অবিজেপি দল। তাই এই বঞ্চনা।” একইসঙ্গে ইংরেজি BUDGET শব্দের ৬টি অক্ষরের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা তুলে ধরেন অভিষেক। ইংরাজি ‘B’ শব্দটির অর্থ ‘বিট্রেয়াল’ অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা। ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “আচ্ছে দিনের ১০ বছরে আজ ৪০ টাকা আলুর দাম, হাজার টাকা গ্যাসের দাম। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে বিজেপির আচ্ছে দিনে।”
এছাড়া ‘U’ অর্থে আনএমপ্লয়মেন্টকে তুলে ধরেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। বলেন, “বিজেপির ১০ বছরে বেকারত্ব ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ৫টি প্রকল্প এবং ৪ কোটি ১০ লক্ষ যুবকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রী ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার। তা পূরণ করা হয়নি। এখন অবাস্তব লক্ষ্য নিয়ে দৌড়চ্ছে এরা।” ‘D’ বলতে তিনি বোঝান ডিপ্রাইড অর্থাৎ বঞ্চিত। তাঁর দাবি, “গত ১০ বছরে দেশের নারী থেকে শিশু এই সরকারের আমলে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া সকলে শুধু বঞ্চিত হয়েছেন। বাংলায় হেরে এরা ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকাও আটকে দিয়েছে। ‘G’ অর্থাৎ গ্যারেন্টি ও ঘোটালা।” এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মাঝেই শাসক শিবির থেকে অভিষেককে থামাতে আওয়াজ ওঠে। পালটা আওয়াজ তোলে বিরোধী শিবির।
এরই মাঝে অভিষেক বলেন, “বিজেপি সবকা সাথ সবকা বিকাশ-এর মন্ত্র ভুলে ‘জো হামারে সাথ, হম উনকে সাথ’ মন্ত্রে চলছে। বাংলার বিরোধী দলনেতা নিজেই একথা বলেছেন। লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির একজনও মুসলিম সদস্য নেই। সংসদে বৈচিত্রের অভাবে, সংসদে সংখ্যালঘুদের আকাঙ্খা পূরণ হচ্ছে না। সরকারি নীতি অসাম্যকে বাহবা দিচ্ছে। তাই লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকারকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।” এছাড়া বাজেটের শেষ ‘T’-এর ব্যাখ্যা করে অভিষেক বলেন, “টি ফর ট্র্যাজেডি। এই সরকারের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করা। বিরোধী দলের লোক হলেই মুখ বন্ধ করতে এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
এদিন সংসদে কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুললে অভিষেককে থামিয়ে স্পিকার বলেন, “এই নিয়ে এর আগে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে।” অভিষেক প্রতিবাদ জানালে স্পিকার বলেন, “আমি স্পিকার। আমি বলছি আপনাকে শুনতে হবে।” তা শুনে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায় শাসকদলের সাংসদদের। পালটা অভিষেক বলেন, “যারা তালি বাজাচ্ছে তাদের জন্য সাতশো কৃষক মারা গেছে। এরা একজনের জন্যও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন?” স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কেউ ৫০ বছর আগে নেহেরু জমানার প্রসঙ্গ তুলে কথা বললে আপনি চুপ থাকেন, আর আট বছর আগের নোটবন্দির প্রসঙ্গে বলতে গেলে আপনি থামিয়ে দেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.