সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাসপাতালের ওয়ার্ডের একখানা সাজানো গোছানো কিউবিকলেই ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে দুই বোন৷ নার্স-আয়া সকলেই তাদের মা৷ চিকিৎসকরাও প্রত্যেকে চেনেন তাদের৷ আদর করেন৷ কেউবা এগিয়ে দেন চকোলেট৷ আর হাসাপাতালের এই পরিবেশেই দিব্যি হুটোপুটি, ছোটাছুটি করে দিন কাটাচ্ছে দুটি বাচ্চার৷ আসলে মুম্বইয়ের ওয়াডিয়া শিশু হাসপাতালই যে ঘর ঋদ্ধি ও সিদ্ধি নামে যমজ বোনের৷
হাসপাতালে তাদের যখন আনা হয়েছিল তখন তারা ছোট্টটি৷ শরীরের অবস্থা সংকটজনক৷ যমজ হলেও মারাত্মক এক বিরল ঘটনা দেখা গিয়েছিল তাদের ক্ষেত্রে৷ দুই বোনেরই শরীরে অংশ জোড়া৷ মা, বাবা নিতান্ত দিনমজুর৷ মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে যখন এই দুই বোনের জন্ম হয়, তখন লোক ভেঙে পড়েছিল তাদের দেখতে৷ এমন বিরল ঘটনা কেউ কোনওদিন দেখেনি৷ রীতিমতো পয়সা দিয়ে তাদের দেখতে এসেছিল গ্রামবাসী৷ কিন্তু বাঁচানোর উপায় কী? সহায় হল এক স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা৷ তারাই শরীর জোড়া লাগা দুই সদ্যোজাতকে নিয়ে আসে ওয়াদিয়া শিশু হাসপাতালে৷ সেখানে বিরল অস্ত্রপ্রচারে আলাদা করা দুই ছোট্ট শরীরে৷ কিন্তু কিছু শারীরিক জটিলতা তারপরও থেকেই গিয়েছে৷ মলত্যাগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে দুই খুদের৷ অনবরত তাই তাদের ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়৷ কিন্তু এ তো পরের কথা৷ শরীর আলাদা করা হলেও চিকিৎসার আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য দুই মেয়েকে হাসপাতালেই রেখে কোলে যান তাদের মা-বাবা৷ বহুবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তেমন কোনও সাড়া মেলেনি৷ মা-বাবার তরফে জানানো হয়েছে, মেয়েকে নিতে তারা ইচ্ছুক, কিন্তু তাদের খরচ বহন করবে কে? দিনমজুর মা-বাবার পক্ষে অসুস্থ দুই বাচ্চার ব্যয় বহন করা প্রায় অসম্ভব৷ আর তাই হাসপাতালই স্থায়ী ঘর হয়ে উঠেছে যমজ বোনের৷
এ সব জটিলতা অবশ্য ঋদ্ধি ও সিদ্ধিকে স্পর্শ করেনি৷ নার্স-আয়াদের কোলে কোলেই তারা বড় হয়ে উঠেছে৷ তাদের নামকরণও করেছেন হাসপাতালের সিইও৷ কোনও চিকিৎসক তাদের জামা কিনে দিয়েছেন, কেউ কিনে দিয়েছেন আলো লাগানো জুতো৷ কোনও চিকিৎসক বা কাজের ফাঁকেই আদর করে গাল টিপে দিচ্ছেন৷ নার্স ও আয়ারা পালা করে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে দিচ্ছেন৷ সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার জন্য একজন আয়াও রাখা হয়েছে৷ নার্স আয়ারা তাদের এই দুই মেয়ের কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত৷কেউ বলছেন কেমন করে তারা মোবাইল গেম খেলতে শিখে গিয়েছে৷ কেউবা বলছেন, টিভি রিমোট অপারেট করতে কেমন শিখে গিয়েছে তারা৷ আর এ সবের মধ্যেই বড় হয়ে উঠছে দুই বোন৷
কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বছর তিনেক বয়স হয়েছে৷ এবার পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয়ের সময় এসেছে৷ কিন্তু না হাসপাতাল না স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা, কেউই ওদের মা-বাবার থেকে তেমন আশার কথা কিছু শোনেনি৷ ফলে হাসপাতালেই দিন গুজরান ঋদ্ধি-সিদ্ধির৷ মা-বাবার সাড়া না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ হাসাপাতাল সুপার অবশ্য দুই বাচ্চাকে নিয়ে যারপরনাই খুশি৷ তবে এখনই তাদের দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা নেই বলেও জানাচ্ছেন৷ সুপারের বক্তব্য৷ যখন সময় হবে ওরা নিজেরাই বাইরে বেরিয়ে যেতে পারবে৷ আর যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন হাসপাতালেই টলমল পায়ে খেলে-ছুটে বেড়াচ্ছে দুই কন্যে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.