সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের দ্রুততম ব্রহ্মস মিসাইল শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে নিখুঁত লক্ষ্যে মারাত্মক হামলা চালাতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সৌজন্যেই গতবছর মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিমের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাবে সদর্পে পা রাখে ভারত। এই প্রথম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সুপ্রিমো এস ক্রিস্টোফার একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, কীভাবে তৈরি করা হয় এই মিসাইল।
প্রতি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে ব্রহ্মস। যে কোনও টার্গেটে ৯৯.৯৯ শতাংশ নিখুঁত হামলা চালাতে পারে। ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’র মতো ব্যালিস্টিক মিসাইলের মতোই মারাত্মক এই ক্রুজ মিসাইল। একবার এই মিসাইল লঞ্চ করা হয়েছে গেলে শত্রুর পক্ষে একে আটকানো কার্যত অসম্ভব। ব্রহ্মস মিসাইলের চরিত্র ও গতিবিধি আঁচ করতে পারে না শত্রুপক্ষ, তাই ভারতীয় নৌসেনা ও পদাতিক বাহিনীও এই ক্ষেপণাস্ত্রকে শামিল করেছে তাদের বহরে। ৮.৪ মিটার লম্বা এই মিসাইল বায়ুসেনার ‘হেভি বম্বার’ সুখোই ৩০ এমকেআই থেকে নিক্ষেপ করা হবে শত্রুর দিকে।
ব্রহ্মস মিসাইলের জন্ম ১৯৯৮-তে, মস্কোয়। ১৯৯১-এ ইরাকে ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’-এ ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে সাফল্য পায় আমেরিকা। যা দেখে ভারতও ক্রুজ মিসাইলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়ার জন্মলগ্নে নয়াদিলির সঙ্গে মস্কোর দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের সৌজন্যে ব্রহ্মস আমদানি ও এদেশে তৈরির সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। ১৯৯৮-এ দুই দেশের মধ্যে ব্রহ্মস মিসাইল নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়। ব্রহ্মস মিসাইলের প্রথম রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি কে চতুর্বেদী (এখন অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, “যুদ্ধে ক্রুজ মিসাইলের গুরুত্ব বুঝতে পারে ভারতও নিজস্ব ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরিতে মন দেয়।”
ভারতে এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করে ব্রহ্মস এরাস্পেস প্রাইভেট লিমিটেড। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ পর্যন্ত পুরোদমে মিসাইল তৈরি ও ২০৩৫ পর্যন্ত এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করবে তারা। ব্রহ্মসের পাল্লা বাড়িয়ে ৮০০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। হাইপারসনিক এই মিসাইল ডুবোজাহাজ থেকেও নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের মন্তব্যে একটু উষ্মাই যেন প্রকাশ পাচ্ছে ক্রিস্টোফারের গলায়। সংসদে পরিকর জানান, ব্রহ্মস মিসাইলের ৬৫ শতাংশই যন্ত্রাংশই নাকি আমদানি করা। কিন্তু ডিআরডিও কর্তা জোর গলায় বলছেন, ব্রহ্মসের আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ ৪০ শতাংশের বেশি নয়।
হায়দরাবাদে ৪০ একর জমির উপরে স্টেট অফ আর্ট ব্রহ্মস ইন্টিগ্রেশন কমপ্লেক্সে (বিআইসি) ৩০০ জনেরও বেশি দক্ষ কর্মী দিনরাত এক করে অসম্ভব গর্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তাঁদের কারও বয়স ৩২ বছরের বেশি নয়। দেশের উদ্যমী যুবশক্তিই এই ৮.৪ মিটার লম্বা মিসাইল নিয়ে একের পর এক বৈঠক করছেন। তবে তাঁদের গাইড করার জন্য সিনিয়ররাও রয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, এই কমপ্লেক্সে কর্মরত প্রত্যেকের বুকে একটাই প্রতিজ্ঞা, ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ব্রহ্মস মিসাইলকে গড়ে তুলতে হবে।
দুই ধাপে তৈরি হওয়া এই মিসাইলের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি এখনও অবশ্য রাশিয়া থেকেই আসে। মিসাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি যেমন ‘বুস্টার’ (যার জন্য এমন দ্রুতগতিতে ছোটে ব্রহ্মস মিসাইল), র্যামজেট ইঞ্জিন, শত্রুকে চিহ্নিত করার যন্ত্র ও মিসাইলে মজুত ৩০০ কিলোগ্রামেরও বেশি অস্ত্র চালনার প্রযুক্তি- সবই এখন আসে রাশিয়া থাকে। চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডিআরডিও-র চিফ কন্ট্রোলার সুধীর কুমার মিশ্র জানাচ্ছেন, ১২টি পর্যায়ে এক একটি মিসাইল তৈরি হয়। হায়দরাবাদে তৈরি হওযার পরও একটি তৃতীয় সংস্থাকে দিয়ে প্রতিটি মিসাইলের কোয়ালিটি টেস্ট করা হয়। একটি গোটা ব্যাচের মধ্যে থেকে যে কোনও একটি মিসাইলকে বেছে প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখা হয়। কোথাও কোনও ত্রুটি মিললে গোটা ব্যাচটাই বাতিল করে দেওয়া হয়।
সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার আকুলা হরিশ বলছেন, “এখানে মিসাইলে ত্রুটি মিললে ক্ষতি নেই, কিন্তু আকাশে যেন একটিবারও কেউ ব্রহ্মস মিসাইলের দিকে একটাও আঙুল তুলতে না পারে।” যখন বিশ্বের সবচেয়ে ভারী মিসাইল ‘ব্রহ্মস’ বিশ্বের বৃহত্তম লঞ্চার ‘সুখোই-৩০ এমকেআই’ থেকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন ভারতই বায়ুসেনার সমকক্ষ আর কেউ আকাশে টিকে থাকতে পারবে না, বলছেন সুধীর মিশ্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.