সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্মের নামে একদিকে যেমন হানাহানি চলছে, অন্যদিকে তেমনই গুটিকয়েক মানুষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন সম্প্রীতির বার্তা। এমনই এক ব্যক্তি মোতিবার রহমান। অসমের একটি মন্দির দেখভালের কাজ করেন তিনি। রোজ নিয়ম করে সকাল উঠে ভক্তিভরে সব কাজ সামলান।
গুয়াহাটির এই মন্দিরটি রংমহল এলাকায় অবস্থিত। ভগবান শিবের মন্দির এটি। ব্রহ্মপুত্রের তীরে এই মন্দিরটিতে বংশানুক্রমিকভাবে সেবায়েত হয়ে রয়েছে এই মুসলিম পরিবার। প্রপিতামহ, পিতামহের কাঁধ থেকে এখন এই দায়িত্ব মোতিবারের কাঁধে বর্তেছে। প্রায় সাতের দশক থেকে মন্দির দেখভাল করছে তারা। মোতিবার প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথমে মন্দির ও চাতাল ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করেন। তারপর প্রদীপ ও ধুপকাঠি জ্বালিয়ে শিবের সামনে বসে প্রার্থনা করেন কিছুক্ষণ।
পিতামহের থেকে তিনি এই শিক্ষা পেয়েছেন বলে জানান মোতিবার। বলেন, “হিন্দুরা এই মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসেন। তারা নাম সংকীর্তন করে। অনেক মুসলিমও প্রার্থনা করতে আসে। ঠাকুরদা এসব খুব পছন্দ করতেন। তিনি সবসময় মন্দির পরিষ্কার রাখতে পছন্দ করতেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনও জিনিস সরানো হত না। এমনকী গাছের একটা ডালও নিয়ে যাওয়া যেত না। সব সময় সাদা কুর্তা, লুঙ্গি ও টুপি পরে থাকতেন তিনি।”
ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এই জায়গাটি শঙ্করদেব ও আজান ফকিরের ভূমি। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে শঙ্করদেব ও সুফি ধর্মগুরু বাগদাদ আজান ফকির এখানেই তাঁদের সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন। এসব মনে করলে গায়ে কাঁটা দেয় মোতিবার রহমানের। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর পূর্বপুরুষ বরহংস শিবের স্বপ্ন পেয়েছিলেন। স্বপ্নে নাকি শিব তাঁকে বলেছিলেন, তিনি এখানেই অধিষ্ঠিত হতে চান। ভগবান এও বলেছিলেন, রহমান পরিবারের সেবাই তিনি পেতে চান। তাই আজও বংশানুক্রমিকভাবে রহমান পরিবার এই মন্দিরের সেবায়েত নিযুক্ত রয়েছেন।
মোতিবার রহমান আত্মবিশ্বাসী যে তাঁর ছেলেরাও ভবিষ্যতে এই কাজ করবেন। ৫০০ বছর ধরে তাঁদের পরিবারে যা চলে আসছে, তা ভবিষ্যতেও চলবে বলে আশা তাঁর। “আমি যখন ২০০৬ সালে মক্কায় হজ করতে গিয়েছিলাম, আমার ছেলেরাই এই দায়িত্ব নিয়েছিল। আমি যেভাবে সেবা করি, ওরা সেভাবে পারেনি। কিন্তু পুরোপুরি চেষ্টা করেছিল,” বলেন মোতিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.