সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতবর্ষে ধর্মস্থানের ‘মিশ্র চরিত্র’ নতুন কিছু নয়। স্পর্শকাতর জ্ঞানবাপী (Gyanvapi Mosque) মামলায় এমনটাই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। অর্থাৎ, মসজিদ-মন্দির বিতর্কে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষেই মত দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার শুনানি শেষে জ্ঞানবাপী মামলাটি নিম্ন আদালতেই ফিরিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আপাতত সিল থাকবে মসজিদের ওজুখানা। তবে নমাজপাঠ করতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করে দিত হবে। এদিন নিজের পর্যবেক্ষণে আদালত জানায়, “এক মুহূর্তের জন্য মন্দির-মসজিদ বিবাদ দূরে সরিয়ে রেখে ভাবুন। ধর্মস্থানের মিশ্র চরিত্র ভারতবর্ষে নতুন কিছু নয়। একটি জরাস্ট্রিয়ান উপাসনালয়ে ক্রুশ মেলার অর্থ এই নয় যে এটা খ্রিস্টানদের ধর্মস্থল। এবং সব ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।” মনে করা হচ্ছে, মসজিদ-মন্দির বিতর্কে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এতদিন জ্ঞানবাপী মামলাটি ছিল বারাণসী দায়রা আদালতে। এদিন মামলাটি বারাণসী জেলা আদালতে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, “এটি খুবই জটিল এবং স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা মনে করি এই মামলাটির শুনানি ডিস্ট্রিক্ট জাজের এজলাসে হওয়া উচিত। মামলার বর্তমান বিচারপতির প্রতি আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। আমরা ইতিবাচক ভাবে মামলাটি অভিজ্ঞ বিচারকের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছি।” এদিন, সার্ভে রিপোর্ট লিক হয়ে শিবলিঙ্গের বিষয়টি সামনে আসার বিষয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, বারাণসী দায়রা আদালত-নিযুক্ত পর্যবেক্ষক দল বৃহস্পতিবার মুখবন্ধ খামে জ্ঞানবাপী মসজিদের অন্দরে ভিডিওগ্রাফি সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট দায়রা বিচারক দিবাকরের কাছে জমা দিয়েছিল। জ্ঞানবাপীর অন্দরে ভিডিও সার্ভের জন্য বারাণসী দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকরের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন, ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি’-র আইনজীবী হুজেফা আহমদি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ গত মঙ্গলবার বারাণসী দায়রা আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল, কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানার জলাধারে ‘শিবলিঙ্গে’র নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনও ভাবেই মসজিদে নমাজ বন্ধ করা যাবে না। শুক্রবার ওজুর জন্য জলের বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বলে, সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০২১-এর আগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়েছিলেন বারাণসী আদালতে। সেই মামলায় কয়েকদিন আগেই বারাণসী আদালতের নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে। কিন্তু এই ভিডিও সার্ভেতে আপত্তি তোলেন মসজিদ কমিটির সদস্য ও তাদের আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, মসজিদের মধ্যে কোনও রকম ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না। কিন্তু পিটিশন দাখিলকারীদের আইনজীবীরা বলেন, তাঁরা আদালতের নির্দেশ মেনেই সব করছেন। তারপরই সুপ্রিম কোর্টে যায় মসজিদ কমিটি। কিন্তু সার্ভে থামাতে কোনও নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে শীর্ষ আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.