সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রতিবাদের কত ধরনই না আছে। কোনওটা উগ্র, আবার কোনওটা এতই নীরব যে প্রতিবাদ চলছে বলে বোঝাই যায় না। সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ শুরু হওয়া এই দেশও আন্দোলনের নানা রূপ দেখছে। দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু করেছে। পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ তাতে শামিল। অবস্থান বিক্ষোভ, স্লোগানে মুখর প্রতিষ্ঠান চত্বর। কিন্তু এসবের মধ্যে একেবারে ভিন্ন পথে প্রতিবাদে নামলেন আইআইএম বেঙ্গালুরুর একদল পড়ুয়া। যা সত্যিই প্রতিবাদের অন্য পথ দেখাল।
আইআইএম বেঙ্গালুরুর পরিবেশ প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক। পড়াচ্ছেন অধ্যাপকরা, মন দিয়ে ক্লাস করছেন পড়ুয়ারা। কলেজ শুরু-শেষের নির্ধারিত সময় ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটারও এদিক-ওদিক হয়নি। এটা ভেবে নেওয়া খুবই স্বাভাবিক যে এখানে CAA বিরোধিতার কোনও আঁচই পড়েনি। কিন্তু সন্ধে নামতেই এখানে ভিন্ন দৃশ্য। কোনওরকম চিৎকার-চেঁচামেচি নয়, নয় কোনও স্লোগান। এত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বোধহয় সাম্প্রতিককালে কেউ দেখেনি। কী সেই প্রতিবাদের ছবি?
সন্ধের পর আইআইএম বেঙ্গালুরুর কাছাকাছি গেলে চোখে পড়বে লাইন দিয়ে রাখা অজস্র গোলাপি পোস্টার, কোনওটার উপরে কিছু লেখা, কোনওটা একেবারে ফাঁকা। আর তাদের উপরে, পাশে রাখা অগুনতি জুতো, চটি। সেসবই আন্দোলনের চিহ্ন। কারও পথরোধ না করে, কাউকে কোনওরকম সমস্যার মধ্যে না ফেলে শুধু ফাঁকা পোস্টার আর জুতোতেই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বজায় রাখছেন পড়ুয়ারা। শুধু সশরীরে উপস্থিত নেই কেউ। তবে এই জুতো এবং পোস্টার রেখে প্রতিবাদ সংগঠিত করার পথটিও শান্তিপূর্ণ।
শুক্রবার সন্ধে ৬টার পর যে আইআইএম বেঙ্গালুরুতে কিছু একটা হবে, তা আঁচ করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের গেটে। যা সাধারণত থাকে না। দেখা গেল, ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এলেন এক অধ্যাপক। তিনি একটি ফাঁকা গোলাপি পোস্টার ক্যাম্পাসের বাইরে রেখে ভিতরে চলে গেলেন। এরপর এলেন ঠিক দু’জন ছাত্র। তাঁরা নিজেদের চটি খুলে পোস্টারগুলি রেখে চলে গেলেন। তাঁদের পর হুইলচেয়ারে চড়ে এলেন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন আরেক ছাত্র। তিনিও নিজের জুতোটি রেখে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলেন। এভাবেই একে একে ক্যাম্পাসের বাইরের গোটা রাস্তাটি ভরে উঠল অজস্র চটি, জুতো আর পোস্টারে।
দীপক নামে এক অধ্যাপকের কথায়, ”CAA এবং NRC আমাদের পরিচয় বদলে দিতে চায়। এটা কেন্দ্রের উপরচালাকি। আমি ছাত্রছাত্রীদের এর বিরুদ্ধে বলতে দেওয়ার পক্ষে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পক্ষপাতহীন থাকাটা দায়িত্ব। আমরা যা করছি, তা কোনও মৌন প্রতিবাদ। প্রয়োজনে সরব হব।” আইআইএম বেঙ্গালুরুর এই ধরনকে প্রতিবাদ হিসেবে দেখলেও, তাঁদের নিজেদের কথায় এটা ‘না-প্রতিবাদ’ বা ‘non-protest’. আর এই ‘না-প্রতিবাদ’ই হয়ত একদিন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আদর্শ ধরন হয়ে উঠবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.