গৌতম ব্রহ্ম: স্কন্দপুরাণে এই পর্বতকে শিখর বারণাবত বলা হয়েছে। মহাভারত বলছে, এখানেই হয়েছিল জতুগৃহ কাণ্ড। বিদুরের বুদ্ধির জোরে পাণ্ডবরা এখান থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। পাণ্ডবদের নদীতে পৌঁছে দেওয়া সেই সুড়ঙ্গের একটা অংশ আজও জীবিত। স্থানীয় গাড়োয়ালিরা যাকে ‘মহাতপা বিল’ বলে পুজো করে। বিশ্বাস করে, আজও ঋষি মহাতপা সূক্ষ্ম দেহে লীন হয়ে আছেন বিলের জলে। ধর্মভীরু হাজার হাজার পাহাড়ি আজও শিখরের শিবমন্দিরে পুজো দিতে আসেন। শিবঠাকুরের এমন দুর্গম দেশেই পৌঁছে গেল সমতলের একঝাঁক শিশু-কিশোর। তাও আবার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। কেউ দৃষ্টিহীন, কারও পা নেই, কেউ আবার মূক-বধির।
কয়েক কিলোমিটার ‘ট্রেক’ করে এই পাহাড়প্রেমীরাই পৌঁছে গেল বারণাবতের শিখরধামে, এক বাঙালি সন্ন্যাসীর কুঠিয়ায়। সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে চলছে রাত্রিযাপন, খাওয়া-দাওয়া। এমনকী যোগাভ্যাসও। শারীরিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই শিশু-কিশোররা এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চলে যাচ্ছে। ব্যাস পর্বতের ঝরনা থেকে জল এনে ফুটিয়ে খাচ্ছে। দুর্লভ জড়িবুটি তুলে আনছে সন্ন্যাসীর নির্দেশে। এবারও প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার বারণাবতে রাত্রিবাস করেছে বেহালার ‘ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ড’-এর এই আবাসিকরা। প্রতিবারই পরম যত্নে শিশুদের সেবা করেছেন শিখরধামের সন্ন্যাসী শঙ্কর মহারাজ। জানালেন, আক্ষরিক অর্থেই এই জায়গা পাণ্ডববর্জিত। শিখরের শিবমন্দিরে ধ্যানস্থ কুন্তীর মনস্কামনা পূরণ করেছিলেন মহাদেব। তাই শিব এখানে মনোকামেশ্বর। পাশের ব্যাস পর্বতের গুহায় বসেই ব্যাসদেব পুরাণ রচনা করেছিলেন। যাঁরা পুরাণ ভালবাসেন, বিশ্বাস করেন তাঁদের জন্য এই জায়গা স্বর্গ।
মহারাজ নিজে ছেলেমেয়েদের যোগের ক্লাস নেন। কখনও নিজের হাতে রেঁধে খাওয়ান। কখনও আবার পুরাণ থেকে গল্প পড়ে শোনান। ‘ভিওডব্লু’-র শৈবাল গুহ জানালেন, “উত্তর কাশীর শিখরধাম ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের পাহাড়জয়ী ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি করে, ব্যবসা করে, ক্রিকেট খেলে, দাবা খেলে।” শিখরে অবশ্য আটকে নেই ভিওডব্লু। এখান থেকেই মহারাজের আশীর্বাদ নিয়ে উত্তরাখণ্ডের নানা শৃঙ্গ জয়ে বের হন আবাসিকরা। এবারও বেরিয়েছেন। একদল গিয়েছে গোমুখের দিকে। আর সংস্থার কর্ণধার গার্গী গুপ্ত নিজে একটি টিম নিয়ে গিয়েছেন যমুনোত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.