Advertisement
Advertisement

রাত নামলেই আগ্রা ফোর্টে হানা দেন কে?

ঐতিহাসিক এবং একই সঙ্গে ভৌতিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে আগ্রার দুর্গ।

A ghost funeral in Chandni Chowk
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 28, 2016 6:33 pm
  • Updated:June 28, 2016 6:33 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাত নামলে তিনি ফিরে আসেন মানুষের পৃথিবীতে। ভায়া আগ্রা।
তবে, প্রতি রাতে নয়। শুধু বৃহস্পতিবার।
আজ পর্যন্ত এই নিয়মের অন্যথা হয়নি।
দিল্লির লোকজনকে জিগ্যেস করে দেখুন! অনেকেই বলবেন, তাঁরা সচক্ষে দেখেছেন বাহাদুর শাহ জাফরকে। বেগম জিনাত মহল আর দেহরক্ষীদের সঙ্গে। অত্যন্ত ক্লান্ত শরীরে, বিমর্ষ মনে, কোনও মতে পা টেনে টেনে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন শেষ মুঘল সম্রাট। সেই ঐতিহাসিক এবং একই সঙ্গে ভৌতিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে আগ্রার দুর্গ।
কী ভাবে শেষ মুঘল সম্রাট প্রতি বৃহস্পতিবারে হাজির হন আগ্রা দুর্গে?

agrafort1_web
উত্তর খুঁজতে গেলে ইতিহাসের পাতার ধুলো সরিয়ে একটু উঁকিঝুকি দিতে হবে। যে সময়ে আগ্রা দুর্গের তখতে আসীন বাহাদুর শাহ জাফর, সেই সময় থেকেই ভারত একটু একটু করে দখলে চলে যাচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। বাহাদুর শাহ জাফরকেও বলাই বাহুল্য ব্রিটিশরা রেয়াত করেনি। তাঁর সিংহাসন কেড়ে নেওয়া হয়। তার পরে, প্রথমে এই শেষ মুঘল সম্রাট ঠাঁই নেন হুমায়ুনের কবর-সংলগ্ন এক বাগানবাড়িতে। সেখান থেকে রেঙ্গুনে নির্বাসন! বলা তো যায় না, প্রিয় সম্রাটকে চোখের সামনে এভাবে দেখে যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে প্রজারা!
ওখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বৃদ্ধ মুঘল সম্রাট।
তবে, সম্রাটকে নিষ্কৃতি দিলেও নির্মম হত্যার হাত থেকে রেহাই পাননি তাঁর তিন সন্তান- মির্জা মুঘল, মির্জা খিজির সুলতান এবং মির্জা আবু বকর। ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হাডসন দিল্লির খুনি দরওয়াজার কাছে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করেন তাঁদের। হত্যা করেন নবাব পরিবারের আরও অনেক সদস্যকেও। তার পর, সবার মৃতদেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় দরজার গায়ে।
অনেকে বলেন, বাহাদুর শাহ জাফরের তিন সন্তান আজও মুক্তি পাননি। অন্যায় ভাবে হত্যা করার জন্য তাঁদের আত্মা আজও প্রতি রাতে ঘুরে বেড়ায় খুনি দরওয়াজার চার পাশে। তাঁরা ভারতীয়দের কিছু বলেন না ঠিকই, কিন্তু বিদেশি দেখলেই তাঁদের প্রাণহানির চেষ্টা করেন। অনেক বিদেশিই জানিয়েছেন, রাতের বেলায় এই চত্বরে তাঁদের কেউ ধাক্কা দিয়েছে, মাথায় মেরেছে!

Advertisement

agrafort3_web
কিন্তু শুধু পুত্ররাই নয়, পিতা-মাতাও আজও পৃথিবী ছেড়ে যাননি! বা, যেতে পারেননি!
তাই রাত গভীর হলেই প্রতি বৃহস্পতিবারে দিল্লির চাঁদনি চকে দেখা যায় এক অভিশপ্ত, ভৌতিক মিছিল। আগ্রা দুর্গমুখী সেই মিছিলে প্রথমে হেঁটে আসে ধোঁয়ার মতো কিছু দেহরক্ষী। পিছনে থাকে আরও জনাকয়েক! সবার মাঝে দেখা যায় মুঘল পরিবারকে।
দেখা যায়, বাহাদুর শাহ জাফরের অবয়ব। মাঝারি উচ্চতা তাঁর, বুক আর কাঁধ বেশ চওড়া। অস্বাভাবিক লম্বা দুটি হাত অসহায় ভাবে ঝুলতে থাকে মাটির দিকে। পা’দুটি সেই তুলনায় বেশ ছোটখাটো। ঢোলা পায়জামা আর শেরওয়ানিতে মুঘল সম্রাট প্রবেশ করেন প্রাণপ্রিয় দুর্গে।
অন্য দিকে, রীতিমতো নজর কেড়ে নেয় বেগম জিনাত মহলের প্রেতাত্মা। তিনি এতটাই দীর্ঘাঙ্গী যে মনে হয় সাইপ্রাস গাছ বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে! তাঁর সর্বাঙ্গে মূল্যবান গয়না, পায়ে মুক্তা-বসানো চটি। সেই মুক্তা, সেই গয়না অন্ধকারে আলো ছড়ায়। বেগমের পরনে থাকে ঘারারা আর কোমরবন্ধ। সেই কোমরবন্ধ বেগমের মতোই বিষাদে নত হয়ে মাটি ছুঁয়ে থাকে!
তবে, কেন প্রতি বৃহস্পতিবারের রাতে আগ্রা দুর্গে ফিরে আসেন সম্রাট আর তাঁর বেগম, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, অন্যায় ভাবে তাঁকে বাসস্থানচ্যুত করা হয়েছিল বলেই মৃত্যুর পরেও তাঁর আত্মা শান্তি পায়নি। শান্তি পাননি বেগম আর নবাবের শেষ জীবনের পার্ষদরাও। তাই তাঁরা আগ্রা দুর্গে ফিরে আসেন মৃত্যুর পরেও!

agrafort2_web
আবার অনেকে বলেন, এই শোভাযাত্রা আসলে শেষযাত্রা! বাহাদুর শাহ জাফর খবর ঠিকই পেয়েছিলেন যে তাঁর তিন সন্তানকে হত্যা করেছে ব্রিটিশরা। আর দেখা হয়নি বলেই সন্তানদের খোঁজে দুর্গে ফিরে আসেন মুঘল-দম্পতি। সেই জন্যই তাঁরা বিষাদময়!
তবে, দিল্লি আর আগ্রার যাঁরাই এই শোভাযাত্রা দেখেছেন, একটা বিষয়ে সতর্ক করে দেন সবাইকে। এই শোভাযাত্রা নজরে এলে তা দূর থেকে দেখাই নিয়ম। যদি কেউ উত্তেজনার বশে কাছাকাছি এসে পড়েন, তবে তিনি আর বেঁচে ফেরেন না। তাঁকেও নাম লেখাতে হয় মৃতের দলে!
বেঁচে থাকতে স্বাধীনতা দখল করে রাখতে পারেননি এই দম্পতি! তাই মৃত্যুর পরে আর কাউকেই রেয়াত করেন না!
বৃহস্পতিবার রাতে আগ্রা দুর্গের কাছে গেলে কথাটা কিন্তু ভুলবেন না!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement