সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আশা ছিল বাড়ি ফেরার। টানা ২১ দিনের লকডাউন কাটিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে ওড়িশা ফিরতে পারবেন ভেবেছিলেন এক যুবক। লকডাউনের জেরে এই যুবক আটকে ছিলেন মহারাষ্ট্রের সাংলিতে। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ হল বাড়ি ফেরার রাস্তা। অবশেষে পরিস্থিতির কাছে হার না মেনে সাইকেল চালিয়ে টানা ৭ দিনের চেষ্টায় বাড়ি ফিরলেন তিনি।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৪টে। গোটা গ্রাম তখন ডুবে ঘুমের জগতে। সাইকেলের পিড়িং পিড়িং শব্দে গ্রামের প্রবীণরা জানলা দিকে তাকাচ্ছেন ইতি উতি। জিন্স-শার্ট পরে, ন্যাড়া মাথার একটি ছেলে বাড়ি ফিরছে সাইকেল চালিয়ে। তাঁর পিঠে বাঁধা ভাড়ি ব্যাগ। এভাবেই প্রায় ৭ দিনের চেষ্টায় বাড়ি ফিরতে পারেলেন বছর কুড়ির মহেশ জেনা। কাজের সূত্রে মহারাষ্ট্রে সাংলিতে গিয়েছিলেন এই যুবক। লকডাউনের জেরে মাত্র এক দিনের নোটিসে বন্ধ হয়ে যায় মহারাষ্ট্রের সমস্ত শিল্পতালুক। ফলে মহারাষ্ট্রের সাংলিতেই আটকে পড়ে সে। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে ক্রমশ বাড়তে থাকে করোনার প্রভাব। ফলে গুজব ছড়ায় টানা ২১ দিন নয় করোনা সংক্রমণের জেরে দীর্ঘ ৭ মাস বন্ধ থাকবে মহারাষ্ট্রের সমস্ত কারখানা। তাই লকডাউন উঠলেই বাড়ি ফিরে আসবে বলে স্থির করে মহেশ। কিন্তু বাধ সাজে সেই করোনা ও লকডাউন। সংক্রমণে আশঙ্কায় বেড়ে যায় লকডাউনে মেয়াদকাল। অন্যদিকে ওড়িশার বাড়িতে পরিবারের সকলের কথা ভেবে দুর্নিবার হয়ে ওঠে সেই যুবক। তাঁর সঙ্গে ওড়িশা থেকে আসা বাকি পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সাইকেল জোগাড় করে কয়েকপ্যাকেট বিস্কুট ও এক বোতল জলকে রসদ বানিয়ে ওড়িশায় জাজপুরের উদ্দেশ্যে সতেরোশ কিলোমিটার যাত্রা শুরু করেন তিনি। সঙ্গে নিয়ে আসেন মহারাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া গেরস্থালির যাবতীয়।
মহেশের কথায়, “রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে আসার সময় প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে দেখে মনে সাহস পাই। তাঁরাও লকডাউন উঠে যাওয়ার ভরসায় বসে না থেকে যে যার মত রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তাঁদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৭দিন পর অক্লান্তভাবে সাইকেল চালানোর পর গ্রামের সীমানা চোখে পড়ে।” অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে তাঁর সঙ্গে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা জানান, “প্রথমে তাঁকে থামাতে পুলিশের ভয় দেখানো হয়। তবে তাতেও রোখা যায়নি।” মহেশ জানায়, “মাত্র ৩ হাজার টাকা পড়ে ছিল আমার কাছে। আর লকডাউন যে উঠে যাবে তার কোনও ভরসা ছিল না। তাই একপ্রকার জেদের বশেই রাস্তায় বের হই। আর পৌঁছে যাই বাড়িতে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.