সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইচ্ছা ছিল দু’পক্ষেরই। আলোচনার টেবিলে বসে টুকটাক নমনীয়তাও দেখিয়েছিল দুই শিবিরই। তবু, শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গেল প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) কংগ্রেসে যোগদান। কিন্তু কেন? কোন সমীকরণ বাধা হয়ে দাঁড়াল ভোটকুশলীর রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে?
সূত্র বলছে, প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ চাইছিলেন। কোনও পদ নয়। তিনি চাইছিলেন গোটা কংগ্রেসটাই তাঁর জন্য হোক মুক্তাঞ্চল। তিনি নিজের মতো কাজ করবেন। গান্ধীদের (Gandhi Family) ছাড়া আর কাউকে রিপোর্ট করতে বাধ্য থাকবেন না। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, প্রশান্তকে এতটা ‘স্বাধীনতা’ দিতে রাজি হয়নি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা চাইছিলেন, পিকের (PK) দেওয়া পরামর্শগুলি ধীরে ধীরে লাগু করতে। সেকারণেই আলাদা কমিটি তৈরি করেছিলেন সোনিয়া (Sonia Gandhi)। সেই কমিটিরই অংশ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল প্রশান্তকে। কিন্তু তাতে তিনি রাজি না হওয়াটাই শেষ মুহূর্তে চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার প্রধান কারণ।
পিকের বেঁকে বসার দ্বিতীয় কারণটি আরও বড়। ভোটকুশলীর স্পষ্ট বক্তব্য, কংগ্রেসের ভাগ্য বদলাতে হলে সাংগঠনিক খোলনলচে বদলে ফেলাটা আশু প্রয়োজন। তিনি রাতারাতি বৃদ্ধতন্ত্রে কোপ দিয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাইছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অনেকটা ‘ধীরে চলো’ পন্থী। রাতারাতি সংগঠনে আমূল বদল কংগ্রেস চাইনি। সেকারণেও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন প্রশান্ত।
তৃতীয়ত, অন্যান্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে প্রশান্তের যোগাযোগ নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন ছিল। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, প্রশান্ত কংগ্রেসের হয়েও কাজ করবেন আবার তাঁর সংস্থা আই-প্যাক (যদিও পিকে দাবি করেন তিনি আই-প্যাকের অংশ নন) অন্ধ্রে জগনমোহন রেড্ডি, তেলেঙ্গানায় টিআরএস (TRS) বা বাংলায় তৃণমূলের (TMC) হয়ে কাজ করবে, সেটা হতে পারে না। সেটাও চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম একটা কারণ।
চতুর্থত, প্রশান্ত গত কয়েক বছরে প্রায় সব ধরনের মতবাদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। কখনও তিনি বিজেপিকে (BJP) সাহায্য করেছেন, কখনও আম আদমি পার্টিকে সাহায্য করেছেন, কখনও তৃণমূলকে সাহায্য করেছেন আবার কখনও কংগ্রেসকেও সাহায্য করেছেন। এ হেন ব্যক্তি মতাদর্শগত ভাবে কতটা কংগ্রেসি হয়ে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একাংশ। যদিও আর একটা অংশের দাবি, মতাদর্শ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ, পিকে নিজে গান্ধীবাদী এবং দেশের জন্য কংগ্রেসের মতাদর্শই যে আদর্শ, সেটা বিশ্বাসও করেন।
সর্বোপরি, প্রশান্ত নাকি গান্ধী পরিবারের তিন সদস্যকে ঐক্যমতে আনতে পারেননি। তিনি চাইছিলেন রাহুলের ভূমিকা বদলে তাঁকে দলীয় সংগঠন থেকে সরিয়ে সংসদীয় কমিটির মাথায় বসাতে। দলের নেতৃত্বে তিনি সোনিয়াকেই চাইছিলেন, তবে প্রিয়াঙ্কার (Priyanka Gandhi) গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, পিকের এই প্রস্তাব মনঃপুত হয়নি রাহুল গান্ধীর। সেটাও তাঁর কংগ্রেসে যোগ না দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও, এই সবটাই জল্পনা। ঠিক কেন শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গেল কংগ্রেস এবং পিকের ‘চুক্তি’, সেটা দু’পক্ষের কেউ মুখ না খুললে স্পষ্ট হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.