সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২২ জানুয়ারি আসতে আর কয়েকটা দিন বাকি। তার আগেই অবশ্য শুরু হয়ে যাচ্ছে রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। কিন্তু ওইদিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠাই যে সমগ্র অনুষ্ঠানের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যত সময় এগিয়ে আসছে, ততই দেশজুড়ে ফিরে ফিরে আসছে পুরনো সময়ের কথা। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে বাবরি ধ্বংসেরও আগে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বহুদিনের বিতর্কের অবসান- সমস্ত ঘটনাবলিই উঠে আসছে আলোচনায়। যার মধ্যে অন্যতম সেই পরিবার, যাঁদের তিন প্রজন্ম জড়িয়ে রয়েছেন অযোধ্যায় (Ayodhya) রামমন্দির (Ram Mandir) আন্দোলনে। আদপে দেশভাগের আগে যে পরিবারের বাস ছিল পাকিস্তানের লাহোরে। কিন্তু স্বাধীনতার সময়ে সেখান থেকে ভারতে চলে আসেন তাঁরা।
শেঠ যুগলকিশোর লাহোরিয়া সেই তিন পুরুষের প্রথম জন। জরুরি অবস্থার সময় আড়াই বছর জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তী সময়ে হরিয়ানা রামমন্দির আন্দোলনের কৌশল তৈরিতে জড়িত ছিলেন তিনি। এখানে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে গত শতকের আটের দশকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও অন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলি ‘রাম জন্মভূমি মন্দিরে’র জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। এর পরই ১৯৮৫ সালে তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার হিন্দুদের বিতর্কিত স্থানটিতে প্রার্থনার অনুমতি দেয়।
ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। বাবরি ধ্বংসের দিনটির অনেক আগে থেকেই এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যুগলকিশোরের ছেলে ও নাতিরা। সেটা ১৯৮৯ সাল। উত্তরপ্রদেশ থেকে কারিগরদের ডেকে পাঠিয়ে রামমন্দিরের মডেল তৈরি করিয়েছিলেন যুগলকিশোরের ছেলে মোহনলাল। হিসারে তখন শুরু হয়েছে রামমন্দির আন্দোলন। এই সময়ই তিনি মন্দিরের ওই মডেল তৈরি করান। যে মডেল নাকি আন্দোলনকে আলাদা গতি দিয়েছিল।
পরের বছর ১৯৯০ সাল। যুগলকিশোরের তিন ছেলে মোহনলাল, মহেন্দ্র ও মদন। অন্যদিকে মোহনলালের দুই ছেলে সুরেন্দ্র ও অশ্বিনী। সকলেই সেদিন ছিলেন অযোধ্যায়। হনুমানগড়িতে চলছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংগালের অনুষ্ঠান। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উপস্থিত জনতার সঙ্গে তাঁরাও ছিলেন সেখানে। এখানে বলে রাখা দরকার, সেই সময় সুরেন্দ্র বয়স কুড়ি। অশ্বিনী মাত্র ষোলো। জানা যায়, অশোক সিংগাল তো বটেই, প্রবীণ তোগাড়িয়া থেকে শুরু করে সাধ্বী ঋতম্বরা, মনোহর লাল প্রমুখ বিশিষ্ট নেতারা লাহোরিয়াদের বাসভবনে আসতেন। এবং আসতেন আরও একজন। তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় হরিয়ানার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
যাই হোক, অশোক সিংগালের বৃষ্টিস্নাত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আসা যাক। সেই অনুষ্ঠান ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য। বিপদের তখনও বাকি ছিল। একসময় পুলিশ গুলিও চালাতে শুরু করে। অগত্যা জঙ্গল ও ঝোপঝাড় পেরিয়েই দৌড়তে শুরু করেন মোহনলালরা। সেদিনের কথা ভাবলে এখনও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন সুরেন্দ্র। জানান, কীভাবে ট্রেনে চড়ে হিসার পৌঁছেছিল সবাই। তখন রাত আড়াইটে। কিন্তু খোঁজ ছিল না মোহনলালেরই। শেষ পর্যন্ত তিনি ফোনে যোগাযোগ করলে তবে সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
এর পর ১৯৯২ সাল। সেই সময় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অশ্বিনী। হয়ে গিয়েছে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সক্রিয় সদস্য। যাই হোক, অযোধ্যায় পৌঁছতে চেয়েছিলেন মোহনলাল। শেষপর্যন্ত সাংবাদিকের ছদ্মবেশেই সুযোগ হয় সহজেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার। ভাই মদনও ছিলেন তাঁরই সঙ্গে। কিন্তু হিসারে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল অশ্বিনীকে।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশক। এখনও সুরেন্দ্রর বাড়িতে রয়ে গিয়েছে রামমন্দিরের মডেল। আর তিনি অপেক্ষায় অধীর ২২ জানুয়ারির জন্য। আর তাঁর সঙ্গেই অপেক্ষায় রয়েছে সারা দেশের অসংখ্য রামভক্ত। ওইদিনই মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। জানা গিয়েছে, রামলালার মূর্তিটি কৃষ্ণবর্ণের পাথরের তৈরি। মূর্তিটি দণ্ডায়মান। এবং পায়ের আঙুল থেকে ভ্রু পর্যন্ত মূর্তিটির উচ্চতা ৫১ ইঞ্চি। প্রতি বছর চৈত্র শুক্লা নবমী, যেদিন রাম নবমী, সেদিন সূর্যের রশ্মি মূর্তির ললাটে সূর্যতিলক এঁকে দেবে। এদিকে মন্দিরে ব্যবহৃত হয়নি কোনও লোহা। কারণ, দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর লোহা স্থাপত্যের কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। মন্দিরের স্থাপত্যের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে এর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটির নিচে একটি অতি শক্তিশালী শিলা তৈরি হবে। মাটির উপরে কোনও ধরনের কংক্রিটের ব্যবহার হয়নি, কারণ কংক্রিটের বয়স ১৫০ বছরের বেশি নয়। এমনই নানা আলোচনা এখন সর্বত্র। যার সঙ্গে ফিরে আসছে যুগলকিশোরের পরিবারের মতো আরও অনেক আন্দোলনকারীর গল্প।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.