দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: নাটকীয়ভাবে সরকার গঠনের পরেও শেষ হল না মহারাষ্ট্রের মহাভারত ! শনিবার সকালে নাটকীয়ভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। তারপর মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা বিক্ষোভ দেখায় শিব সেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে একদিনের মধ্যে আস্থা ভোট করানোর দাবি করে। রবিবার সকালে এই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি এনভি রামান্না, অশোক ভূষণ ও সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সোমবার সকালে সরকার গঠনের আবেদন করে দেবেন্দ্র ফড়ণবিসের দেওয়া চিঠি ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের দেওয়া নির্দেশনামা সুপ্রিম কোর্টে জমা করার নির্দেশ দেন বিচারপতিরা। সেগুলি খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
রবিবার সকালে সাড়ে ১০টায় শুনানি শুরু হয় তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। কংগ্রেস, এনসিপি ও শিব সেনার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভি। বিজেপির পক্ষে মুকুল রোহতগি আর সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তুষার মেহেতা। প্রথমে সওয়াল করতে উঠে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের জারি করা নির্দেশনামা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কপিল সিব্বল। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধে সাতটা নাগাদ কংগ্রেস, এনসিপি ও শিব সেনার মধ্যে জোট বাঁধার কথা ঘোষণা হয়। শনিবার তারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের জন্য আবেদন করবে বলেও জানা যায়। কিন্তু, ঠিক তার পরেরদিন সকালেই আচমকা রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় মহারাষ্ট্র থেকে। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে দেবেন্দ্র ফড়ণবিসকে মুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপি নেতা অজিত পওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে দেখা যায় রাজভবনে। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের আগে কোনও ক্যাবিনেট মিটিংও করা হয়নি। অন্যায়ভাবে সংখ্যালঘু সরকারকে শপথ গ্রহণ করানো হয়েছে। তাই আজই নতুন সরকারকে বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ নিতে নির্দেশ দেওয়া হোক।
অভিষেক মনু সিংভি আবার প্রশ্ন তোলেন এনসিপি নেতা ও সদ্য উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া অজিত পওয়ারকে নিয়ে। দেবেন্দ্র ফড়ণবিসকে সমর্থন জানিয়ে অজিত পওয়ার যে ৪১ জন এনসিপি বিধায়কের সই করা চিঠি জমা দিয়েছেন, তা অবৈধ বলে দাবি করেন। উল্লেখ করেন, ওই বিধায়করা ইতিমধ্যে অজিত পওয়ার নাম ভুল বোঝানোর অভিযোগ জানিয়ে শরদ পওয়ারকে চিঠি দিয়েছেন। তারপরই অজিত পওয়ারকে দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ফড়ণবিসকে সমর্থন জানিয়ে এনসিপি বিধায়কদের সই করা চিঠির আর কোনও মূল্য নেই। কর্ণাটকের ক্ষেত্রেও অতীতে সুপ্রিম কোর্ট এমন ফ্লোর টেস্টের ব্যবস্থা করেছিল। একই ব্যবস্থা এখানেও করা হোক।
তাঁদের বক্তব্য শোনার পর এবিষয়ে সরকারপক্ষের কথা শুনতে চান বিচারপতিরা। তখন সরকারপক্ষের আইনজীবী তুষার মেহেতা এবিষয়ে কিছুটা সময় দেওয়ার আবেদন জানান। বলেন, তাঁকে শনিবার রাতেই এই মামলাটির বিষয়ে জানানো হয়েছে। কাগজপত্র খতিয়ে না দেখে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
তিনি কিছু না বললেও মহারাষ্ট্র বিজেপি ও কয়েকজন বিধায়কের পক্ষ দাঁড়ানো আইনজীবী মুকুল রোহতগি উলটে তিনটি দলকেই দোষারোপ করেন। তাঁর অভিযোগ, তিন সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালালেও শিব সেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি সরকার গঠনে বিলম্ব করছিল। মহারাষ্ট্রের মানুষের অসুবিধা হলেও সরকারের গঠনের জন্য কিছু করেনি। তাই বাধ্য হয়ে বিজেপি ও এনসিপি নেতা অজিত পওয়ারকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তাছাড়া সংবিধানের ৩৬১ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল কোনও আদালতেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। এই ঘটনার ক্ষেত্রে তা মেনে চলা উচিত বলে আমি মনে করি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.