সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শুরুতেই ধাক্কা। সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) ডাকা এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী বৈঠকে অনুপস্থিতি ৬টি উল্লেখযোগ্য বিরোধী দল। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি সোনিয়ার ডাকা ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। এদিন বৈঠক শুরু হতেই দেখা গেল তৃণমূলের পাশাপাশি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, এবং শিব সেনার কোনও প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত হননি। সব মিলিয়ে মোট ২০টি দল বৈঠকে হাজির হলেও, এদের অধিকাংশই ছোট এবং প্রান্তিক।
লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবিরে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, লোকসভার পরে আর তা চোখে পড়েনি। সোনিয়া গান্ধী সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখে ফের বিরোধীদের একত্রিত করার একটি প্রয়াস করেছিলেন। কিন্তু, সেই প্রয়াসে শুরুতেই ধাক্কা খেল কংগ্রেস। সোনিয়ার ডাকে সাড়া দিলেন না তাঁর বিশ্বস্ত সৈনিকরাই। যে ২০টি দল তাঁর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত হল তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলতে, শরদ পওয়ারের এনসিপি, লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি, হেনন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। এদের মধ্যে পওয়ার এবং হেমন্ত সোরেন নিজে উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। আরজেডির তরফে উপস্থিত ছিলেন মনোজ ঝাঁ। এছাড়া এদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চার বাম দলের প্রতিনিধি। খোদ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।বাকি কয়েকটি ছোট দলও এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিল।
তবে, উপস্থিতির তুলনায় অনুপস্থিতির সংখ্যাটাই বেশি উল্লেখযোগ্য। উত্তরপ্রদেশের দুই মহারথী মায়াবতী ও অখিলেশ এদিনের বৈঠকে ছিলেন না। তাঁদের কোনও প্রতিনিধিও আসেননি। মায়াবতীর সঙ্গে কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। অখিলেশও এই মুহূর্তে জল মাপছেন। নিন্দুকেরা অবশ্য বলছেন, এদের না আসার পিছনে সিবিআই-ইডির জুজু কাজ করছে। বৈঠকে না যাওয়ার পিছনে শিব সেনা এবং আপের যুক্তি, তাঁদের নাকি আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। তবে, এদিন সবচেয়ে অবাক করা অনুপস্থিতি ডিএমকের। বেশ কিছুদিন ধরেই দাক্ষিণাত্যে ডিএমকে কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সঙ্গী। দলের সবচেয়ে খারাপ সময়েও তাঁরা কংগ্রেসকে ছেড়ে যায়নি। অথচ, সেই ডিএমকেই এদিনের বৈঠকে গরহাজির। আসলে, তামিলনাড়ুর স্থানীয় নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে কংগ্রেস ও ডিএমকের সামান্য মতবিরোধ চলছে। সেজন্যই হয়তো অনুপস্থিত ছিল ডিএমকে।
খানিক অস্বস্তিতে পড়লেও বৈঠক শেষে মোদি সরকারকে তোপ দাগতে ছাড়লেন না প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, “বেকারত্ব, অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এনেছে সরকার। মোদি সরকার আমাদের দেশকে হারিয়ে দিয়েছে। আমাদের কাছে সুযোগ ছিল বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। কিন্তু, মোদি সরকার সেই সুযোগ নষ্ট করে দিল। প্রধানমন্ত্রীর যদি সাহস থাকে, তাহলে স্বীকার করুন অর্থনীতির করুণ দশার কথা। সাহস থাকলে নিরাপত্তারক্ষীদের না নিয়ে দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, পড়ুয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বলুন, আমি দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে এই এই উদ্যোগ নেব। আমি জানি, আপনার সেই সাহস নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.