বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে বারবার সরব হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন দক্ষিণ ভারতের দুই মুখ্যমন্ত্রী, তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন ও কেরলের (Kerala) পিনারাই বিজয়ন। যেভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI) এবং ইডিকে (ED) রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক বলে সরব তাঁরা।
তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালরাও রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর করা একটি মন্তব্য টেনে আনেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ((Tamil Nadu CM M K Stalin) । নরেন্দ্র মোদির আমলেই কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সবচেয়ে প্রবলভাবে আঘাত করছে বলে সোচ্চার হয়েছেন দুই দক্ষিণী মুখ্যমন্ত্রী।
মোদি সরকার যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলতে চাইছে, সেই অভিযোগ তুলে সবার আগে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একে একে সেব্যাপারে সহমত পোষণ করছেন বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে কান্নুরে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে সিপিএম। এই সেমিনারে বক্তব্য রাখতেই এসেছিলেন স্ট্যালিন। কেরলের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ কে ভি থমাসকেও এই সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেমিনারে যোগ দেওয়া নিয়ে থমাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় কেরল প্রদেশ কংগ্রেস। সিপিএমের মঞ্চে গেলে বহিষ্কারের হুমকি দেন প্রদেশ সভাপতি কে সুধাকরন। হুমকি উপেক্ষা করেই এদিন সেমিনারে যোগ দেন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ।
সেমিনারে এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোড়াফলা শানান কেরল ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা। মোদি সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের অভিযোগ, রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে দেউলিয়া করে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। এই সরকার জিএসটি চালু করার পর রাজ্য থেকে সমস্ত কর আদায় করে দিল্লিতে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাজ্যের পাওনা মেটাচ্ছে না। তামিলনাড়ু সরকার জিএসটি বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা পায় বলে দাবি করেন।
শুধু আর্থিকভাবে নয়, রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ স্ট্যালিনের। রাজ্যপালকে ইঙ্গিত করে স্ট্যালিন বলেন, ‘‘কেন্দ্রের একজন প্রতিনিধি রাজভবনে বসে থাকেন। সেখান থেকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করতে তিনি বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক।’’ এই প্রসঙ্গে জ্যোতিবাবুর একটি মন্তব্যকে টেনে স্ট্যালিন বলেন, “এক রাজ্যপাল সম্পর্কে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য মৃত্যুপুরী তৈরি করেছেন। যাতে গণতন্ত্রকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে দাঁড় করাতে পারেন।” এখন বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালরাও একই কাজ করছেন বলে অভিযোগ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকা নিয়ে একই সমালোচনা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীরও।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে মোদি সরকার ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের। যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে বিজেপি বিরোধী রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্র ও সংবিধানে বিশ্বাস করে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফেলতে চায়। এক দেশ, এক আইন ও এক ভাষার কথা বলে ওরা। এই দর্শন দেশের গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করছে।’’
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যেভাবে পিনারাই বিজয়ন লড়াই করছেন তাঁকে কুর্নিশ জানান স্ট্যালিন। পিনারাইকে ‘লৌহমানব’ বলে প্রশংসা করেন। সংবিধানে রাজ্য সরকারের হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। কোনও সরকার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী নয়। তাই সংবিধানে কিছু সংশোধন করার প্রয়োজন বলে একমত হন দুই মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের বারবার আক্রমণের বিরুদ্ধে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। শুধু নির্বাচন এলে নয়। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক দৃঢ় করতে সারাবছর একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তামিলনাড়ু ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জোট বাধার জন্য ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে বিজেপি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.