সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাবা-মা ছোটবেলায় মারা যাওয়ার পর দিন কেটে কষ্টে। গরিবি কি, তা ভালভাবেই জানেন তাঁরা। তাই তো লকডাউনে রোজগারহীন মানুষগুলোর যন্ত্রণা যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে তাঁদের। তাই দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিজেদের জমি বিক্রি করে দিলেন দুই কৃষক ভাই। ব্যবস্থা করলেন ৩ হাজার গরিব মানুষের খাওয়াদাওয়ার। তাঁদের উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রায় সকলেই।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছেন। দিদার স্নেহেই বড় হয়ে ওঠা। ছিল না খাবারের সংস্থান। কোনওদিন খাবার জুটেছে তো কোনওদিন পেট না ভরার যন্ত্রণা বুকে চেপেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ছোট্ট দুই ভাই। এই বিপদের দিনে বারবার পাশে পেয়েছেন স্থানীয়দের। ছোট থেকে তাঁদের সাহায্যেই বড় হয়ে উঠেছেন কর্ণাটকের কোলারের বাসিন্দা তাজাম্মুল এবং মুজাম্মিল পাশা। বর্তমানে বিঘের পর বিঘে জমিতে কলা চাষ এবং রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করেন তাঁরা। আয়ও হয় যথেষ্ট। দুর্ভাবনা ছাড়া দিব্যি দিন কাটে তাঁদের। কিন্তু লকডাউনের দিনগুলিতে চিন্তাভাবনা ছাড়া যেন কাটছেই না দুই ভাইয়ের। তবে নিজেদের জন্য নয়, কীভাবে গরিব মানুষগুলো লকডাউনে খাওয়াদাওয়ার খরচ জোগাড় করছেন, তা নিয়ে বড্ড চিন্তিত দু’জনে।
ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন বসতবাড়ি ছাড়া বাকি সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে দেবেন তাঁরা। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তড়িঘড়ি এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তাতেই সিদ্ধান্ত হয় আপাতত গ্রামেরই সামান্য কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে জমির কথা লিখে দেবেন তাঁরা। লকডাউন ওঠার পর আইনি নিয়মকানুন মেনে হবে সম্পত্তি হস্তান্তর। সেই অনুযায়ী লেখালেখি শেষে ২৫ লক্ষ টাকা হাতে পেয়ে যান পাশা ভাইয়েরা।
জমি বিক্রির ওই টাকা দিয়ে অন্তত ৩০০০ জন গরিব মানুষের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেন তাঁরা। প্রথমে কেনেন চাল, ডাল, তেল-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যসামগ্রী। এরপর খুলে ফেলেন কমিউনিটি কিচেন। লকডাউনের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অল্প সংখ্যক লোক দিয়েই চলছে রান্নাবান্না। দুস্থদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার। এছাড়াও গরিব মানুষদের দেওয়া হচ্ছে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারও। দুই ভাই বলেন, “আমরা দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে ওঠেছি। আমরা বাঁচতে পেরেছি কারণ সকলে আমাদের পাশে ছিল। তাই এবার সকলের পাশে থাকার জন্য এই উদ্যোগ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.