সুব্রত বিশ্বাস: সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ট্রেন লাইন দিয়ে শ্রমিক হাঁটলে কোর্টের কিছু করার নেই। লাইনের উপর দিয়ে হেটে আসা আধ ডজন শ্রমিককে সোমবার সকালে নাগালে পেয়েও কিছু করতে পারল না আরপিএফ। বরং লাইন ধরে হাঁটলেও সতর্ক থাকা উচিত, কী করণীয় ও কোনদিকে নজর রাখতে হবে এমন পাঠ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। তাঁরা আবারও লাইনের উপর দিয়ে হাটতে শুরু করে গন্তব্যের দিকে। সুরাট থেকে লাইন ধরে হেঁটে ১৭ দিনের মাথায় রাজস্থানের কোটা স্টেশনে পৌঁছন হাফ ডজন শ্রমিক।
কোটার আরপিএফ কর্মীদের শ্রমিকরা জানান, নিত্য দুর্দশার কথা। লকডাউন হতেই কাজ গিয়েছে। অপেক্ষায় ছিলেন, হয়তো তা খুলবে। কিন্তু লকডাউন বেড়ে চলায় হাতে টান পড়ে। খাবার নেই, নেই পয়সা। শিয়রে মৃত্যুর হাতছানি। সড়ক পথের হদিশ জানা নেই। ট্রেন লাইন ভরসা। ছেড়ে দিলে একদিন পৌঁছে যাবে। এই উদ্দেশ্যে ১৭ দিন ধরে লাইনের উপর দিয়ে হেঁটেই চলেছেন তাঁরা। রাতের অন্ধকারে চলা দুষ্কর। তার উপর সারা দিনের পথচলা। অন্ধকারে লাইনের ধারেই বসে পড়ে খানিকটা বিশ্রাম। দীর্ঘ পথ চলায় পা ভাঁজ হয় না। কোনও মতে তা সোজা রেখেই ঈশ্বরের নাম করা ছাড়া আর কিছু করার নেই তাঁদের। হাঁটতে গিয়ে পিছনে ছেড়ে গিয়েছে একের পর এক নাম না জানা স্টেশন। সেখানে জল পেলে তা পেট ভরে খেয়ে নিয়েছেন। আগামীর জন্য মজুত রেখেছেন বোতলে। লাইনের পাশে ফুটে থাকা বুনো ফুল, অজানা ফলই ভরসা পড়া পেটের।
আরপিএফ কর্তাদের কথায়, চরম দুর্দশা, ভাগ্যের ফেরে শ্রমিকদের এই দুঃখের দিনে কিছু করার নেই। কিছু খাবার দিয়ে তাঁদের আবার লাইনে নামতে দেওয়া হয়। সুরাট থেকে কোটার দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। যা পেরতে মেল, এক্সপ্রেস সময় নেয় দশ ঘন্টা। পরিশ্রান্ত শ্রমিকগুলো ওই পথ পাড়ি দিয়েছেন সতেরো দিনে। যার মোদ্দা কথা, দৈনিক লাইন ধরে তাঁদের চলতে হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। ঔরঙ্গাবাদে লাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর তাঁরা জানেন না। তাঁদের কথায়, এভাবে বেঁচে থেকে লাভই বা কী? ভ্রূক্ষেপহীন হয়ে আবার পথ চলা শুরু করেন তাঁরা। এবার যাত্রা কোটা টু এটাওয়া। কবে শেষ হবে এ পথ চলা নিজেরাও জানেন না। লড়াই যে শ্রমিকের বেঁচে থাকার উপায়, সেটাই জানেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.