গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর করোনা (Coronavirus) অতিমারী (Pandemic)। একশো সাত বছরের ব্যবধানের দু’টি ঘটনারই সাক্ষী তিনি। নিজেই যে ১২৫ নট আউট! দেখে বোঝার উপায় নেই। সটান চিত হয়ে শুয়ে জোড়া পা তুলে দিচ্ছেন আকাশের দিকে। কখনও উপুড় হয়ে শুয়ে সটান মাথা তুলছেন ফণার মতো। ষাট পেরিয়েই বহু লোক যখন থুত্থুরে, ইনি এক লহমায় আয়েশে সারছেন সর্বাঙ্গাসন, ভুজঙ্গাসন। পঁচিশ বছর আগে সেঞ্চুরি করা এই স্বামী শিবানন্দ করোনাকে ঠেকিয়েছেন হেলায়। অন্যেরা যখন অ্যান্টিবায়োটিক, মাল্টি ভিটামিন খেয়েছে মুড়ি-মুড়কির মতো, শিবানন্দের নিরাভরণ মেনুতে জায়গা পেয়েছে সব্জি সেদ্ধ, সেদ্ধ ডাল, দুটো রুটি।
করোনা রোগীর শরীরে দুর্বলতা অন্যতম উপসর্গ। এমনকী, যাঁদের অন্যান্য উপসর্গ অত্যন্ত কম, বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করে সেরে উঠেছেন, তাঁদেরও শরীরময় অবসাদের আকর। সামান্য পরিশ্রমেই হাঁফ ধরেছে, সঙ্গে মাথা ঝিমঝিম, শ্বাসকষ্ট। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমন দুর্বলতা মোকাবিলা করার একমাত্র উপায়। রোজকার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের অন্তর্ভুক্তি। অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া।
চিরাচরিত সেই ধারণাতেই ধাক্কা দিয়েছেন নেতাজির এক বছরের সিনিয়র। ভক্তদের করোনামুক্ত থাকার উপায় বাতলেছেন। বলেছেন, অযথা ভয় না পেতে। একাধিক ভারচুয়াল মিট করেছেন। এমন এক মিটেই অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানের সঙ্গে আড্ডা মেরেছেন, গান শুনেছেন। ভিডিওকলে ভক্তদের অভয় দিয়েছেন শিবানন্দ বাবা। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর পুরী, বাঁকুড়া ও নবদ্বীপে গিয়ে সহায়—সম্বলহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফি ডিসেম্বরে পুরীতে কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে বড় কর্মসূচি থাকে তাঁর। ভক্ত সুব্রত ঘোষের কথায়, “বাবার কথা শুনে যাঁরা চলেছেন করোনা তাঁদের টিকিও ছুঁতে পারেনি।”
জন্ম ১৮৯৬ সালে। পাসপোর্ট ও আধার কার্ডে সেই ছাপ জ্বলজ্বলে। এই বয়সে সামান্য এই আহারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব? দেশের কোভিড প্রোটোকল প্রণয়নকারী টিমের অন্যতম সদস্য ডা. অবিচল চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, নিরামিষ খেয়েছেন বলেই ভালো আছেন বিশ্বের এই অন্যতম প্রবীণ। তাঁর কথায়, “মাছ, মাংস, ডিম না খেলে করোনা ঠেকানো যাবে না, এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শাক-সব্জি খেয়েও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব। এবং তা ভালো ভাবেই।” আর স্বামীজির বক্তব্য, “বিনাপি ভেষজৈ ব্যধি পথ্যাদেব নির্বততে। ন তু পথ্য বিহীনা নাং ভেষজনাং শতৈরপি। অর্থাৎ কিনা, ওষুধ ছাড়াই কেবল পথ্য দ্বারা রোগ নিরাময় হতে পারে। কিন্তু পথ্য ব্যতীত শত ওষুধেও আরোগ্য লাভ হয় না।’’
যাঁর জন্মের তিন বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ বক্তব্য রেখেছেন শিকাগোয়, সেই মানুষটি জানিয়েছেন, রাত ন’টার মধ্যে বিছানায় যাওয়া আর ভোর চারটের মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়া- এমন বাঁধা নিয়মেই তাঁর শরীর এখনও লৌহকপাট। অসুখবিসুখের প্রবেশাধিকার নেই। বারাণসীবাসী মানুষটি জানিয়েছেন, জপ-ধ্যান, যোগব্যায়ামেই শরীর দিব্যি তরতাজা তাঁর। তবে আফসোস একটাই। অনেকেই তাঁর কথা শোনেন। কিন্তু অনুসরণ করেন না। দু’দিনেই ভুলে যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.