সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের মাটি অবশেষে স্বীকার করে নিল তাঁকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ভারতের নাগরিকত্ব পেলেন শতায়ু যমুনা বাই। শুক্রবারের আগেও যাঁর পরিচয় পত্রে জ্বলজ্বল করত ‘পাক হিন্দু’ তকমা। অথচ মনের গভীরে সগর্বে উড়ত তেরঙা। যমুনা বাইয়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতে। ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৯ বছর আগে। এই জন্মভূমি তাঁকে প্রকৃত অর্থে আপন করে নিল স্বাধীনতা অর্জনের ৭২ বছর পর। ১০১ বছরের যমুনা বাই ভারতের নাগরিক হলেন প্রায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর। আর এভাবেই তিনি গড়ে ফেললেন অনন্য এক রেকর্ড। পুরুষ-নারী ভেদে তিনি হলেন প্রবীণতম ব্যক্তি যিনি ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করলেন।
[‘বিতর্কিত’ কবিতা লিখে অসমে হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে শ্রীজাত ]
দেশ ভাগের আগে যমুনা বাইয়ের পরিবারের নিবাস ছিল রাজস্থানে৷ যা বিভাজনের পর পড়ে পড়শি পাকিস্তানের আওতায়। কিন্তু সে দেশে নিদারুণ দারিদ্র, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন গুজরান হত তাঁদের। সেখানকার এক জমিদারের জমিতে কাজ করতেন ভূমিহীন যমুনার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু যতটা খাটতেন, সেই তুলনায় আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ছিল অমিল। কোনও কোনও দিন তো ছুটিও পেতেন না। তবু এক রকমভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়। পরিস্থিতির বদল ঘটল ১৯৯২-তে। ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার বিতর্কিত ঘটনা ঘটার পর। যমুনার কথায়, “এই ঘটনার পর রাতারাতি আমাদের সঙ্গে মুসলিম মালিকদের ব্যবহার বদলে যায়। ও দেশে থাকা আর সম্ভবপর হচ্ছিল না। মাঝে মাঝে সব কিছু দুঃস্বপ্নের মনে হত! ২০০০-এর থেকে ভারতে চলে আসার ভাবনা-চিন্তা শুরু করলাম। তবে সব কিছু ঠিক হতে হতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। এতকাল ধরে ওখানে যে ভিটেমাটি আগলে বসেছিলাম, তা ছেড়ে আসতে আসতে আসতে ২০০৬ এসে গেল। আমরা আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে ২০০৬-তে আগস্ট মাসে ভারতে প্রবেশ করলাম।’’
[সমাজের মূল স্রোতে মেশার সুযোগ, কুম্ভমেলায় ‘কিন্নর আখড়া’]
কিন্তু ওই যে, মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক! যেমনটা ভেবেছিলেন, হিন্দুস্থানে পা রেখে মোটেও তেমন সুখকর অভিজ্ঞতা হয়নি যমুনা ও তাঁর পরিবারের। পড়শি মুলুক থেকে এসেছেন শুনেই ধারাবাহিক ভাবে প্রশাসনের অজস্র প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। প্রাণপাত করতে হয়েছে এক টুকরো মাথা গোঁজার আশ্রয় খোঁজার জন্যও। প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে রাজস্থানের যোধপুরে সোধা রি ধানি গ্রামে দু’কামরার ছোট বাসা পেয়েছেন তিনি। সেখানেই বর্তমানে থাকেন ছেলে ও পরিবার নিয়ে। ২০১৫-তে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন যমুনা৷ অবশেষে তিন বছর পর ‘ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৫’-এর আওতায় তাঁর সেই আবেদন গৃহীত হয়৷ পাশাপাশি অনুমোদনের সিলমোহরও পরে। সম্পূর্ণ হয় একটা অধ্যায়। যোধপুরে যমুনার বাড়িতে তাই এখন রীতিমতো উৎসবের মেজাজ। চলছে মিষ্টি বিতরণ। বয়সের ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকানোর পর এতদিনের সাধপূরণে উচ্ছ্বসিত যমুনা তাই এখন চান, তাঁর পরিবারের অন্যান্যরাও যেন তাঁরই মতো এ দেশের নাগরিকত্ব পান। বাকিটা জীবন কাটাতে পারেন ভারতভূমেই৷ নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.