সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উমর খালিদ। নাম তো সুনা হি হোগা। গতবছর ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির প্রসিদ্ধ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সংসদ হামলার মূলচক্রী জঙ্গিনেতা আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদসভা আয়োজনের ঘটনার পর থেকেই খবরের শিরোনামে চলে আসে এই ছাত্রনেতার নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের খেপিয়ে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ছাড়াও আরও বহু অভিযোগ ছিল তাঁর উপর। তারপর থেকে দীর্ঘদিন পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন তিনি-সহ পাঁচ জেএনইউ পড়ুয়া।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সেইদিন দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু হয় উমর, জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমার-সহ ৯ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। মাঝে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। নোট বাতিল, যাদবকুলে মূষলপর্বের মধ্যে অনেকেই উমরের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন বলা যায়। যদি না সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামজস কলেজে একটি সেমিনারে উমরকে ডাকা না হত। উমরকে আমন্ত্রণের জেরে ফের একবার সেকুলার বনাম দেশভক্তদের সংঘাত হয়। উত্তপ্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। দুই ছাত্র সংগঠন আইসা-এবিভিপির সদস্য সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে ফের একবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এল উমরের নাম। কিন্তু আমরা কতটাই বা চিনি উমরকে। শুধুই জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা তাঁর একমাত্র পরিচিত হতে পারে না। যদি সত্যিই উমরের সম্পর্কে জানতে হয় তবে আপনাকে পড়তেই হবে এই প্রতিবেদন। নিচে রইল উমর সম্পর্কে দশটি এমনই অজানা তথ্য-
১. জেএনইউয়ে ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করছেন উমর। উল্লেখযোগ্য বিষয়, ৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় পুলিশ যতই মূল অভিযুক্ত হিসাবে কানহাইয়াকে গ্রেপ্তার করুক না কেন, আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদসভা আয়োজনের ভাবনা কিন্তু উমরেরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
২. জানেন, ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট অনুযায়ী, উমরের দলবল জেএনইউ ছাড়াও দেশের আরও ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজলের ফাঁসির প্রতিবাদসভা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল। যদিও উমর এই তথ্য অস্বীকার করেছেন। সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নাম ভাবা হয়েছিল, ‘পোস্ট অফিসহীন এক দেশ’।
৩. এই ২৮ বছরের ছাত্রনেতা ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা ডিএসইউ ছাড়েন।
৪. বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত করা উমর জেএনইউ থেকে ইতিহাসে এমএ এবং এমফিল করেছেন। তবে এই উমরই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আফজলের ফাঁসির প্রতিবাদসভা আয়োজনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
৫. উমরের বাবা সৈয়দ কাসিম ইলিয়াস একসময় স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট বা সিমির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে এই সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই তিনি সংগঠন ত্যাগ করেন।
৬. উমর সম্পর্কে তাঁর বাবার বক্তব্য বেশ চমকপ্রদ। তিনি বলেছেন, ‘ওঁর মতাদর্শই ওঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। উমর একজন মেধাবী পড়ুয়া, নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমএ এবং এমফিল পাস করেছে। ওঁ আদর্শবান বলেই দেশের মিডিয়া ওঁর পিছনে পড়েছে। রাষ্ট্রের ভাবনাচিন্তার সঙ্গে উমরের মত মেলে না বলেই এত ঝামেলা।’
৭. উমরের বন্ধুরা কী বলে জানেন? তাঁদের মতে, উমর বামপন্থায় বিশ্বাসী একজন নাস্তিক। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলিম নয়।
৮. পুলিশের চোখে পলাতক উমর-সহ পাঁচ জেএনইু পড়ুয়া গত রবিবার রাতেই ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে ঢোকে। সেখানে অন্যান্য পড়ুয়াদের উদ্দেশে উমর ভাষণ দেন, ‘আমার নাম উমর খালিদ, আর আমি কোনও জঙ্গি নই।’
৯. গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লি পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত উমরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু সেই উমরই কিছুদি আগে রামজস কলেজের সেমিনারে আমন্ত্রিত ছিলেন। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন কি?
১০. উমর ছাড়াও চার অভিযুক্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনন্তপ্রকাশ নারায়ণ, আশুতোষ কুমার এবং রামা নাগার বিরুদ্ধে পুলিস লুক আউট নোটিস জারি করেছে। এদের প্রত্যেককেই ৯ ফেব্রুয়ারি দেশবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে ভিডিও ফুটেজে।
সর্বোপরি একটা কথা। নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই এটা বলতেই হচ্ছে, আফজল গুরুর মতো জঙ্গির ফাঁসির প্রতিবাদে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া, দেশকে টুকরো করার কথা বলে পড়ুয়াদের খেপানো এবং নিজের সেই দাবিকে বাকস্বাধীনতা বলে চিল চিৎকার জুড়ে দেওয়া উমরদের এই কার্যকলাপ আর যাই হোক, দেশের হিতের জন্য মোটেই নয়। গুরমেহরদের মতো কার্গিল শহিদ কন্যার ফেসবুক পোস্ট এমনই ভয়ানক বিরুদ্ধাচরণের বীজবপনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এইভাবেই যদি দেশের যুবসমাজ উমরদের নিজের রোল মডেল করে এগিয়ে চলে তবে বড় বিপদ!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.