সোনা-হীরের মোড়কে কিংবা ট্যাটুর ট্যুইস্টে এখন দাঁতকেও করে তুলুন নজরকাড়া। যা এনে দেবে হাসিতে এক অনন্যতার ছোঁয়া। ট্রেন্ডি এই ট্রিটমেন্টের কথাই বিস্তারিত বললেন প্রস্থোডন্টিস্ট এবং ইমপ্ল্যান্টোলজিস্ট ডা. প্রিয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করলেন পৌষালী কুণ্ডু।
মুচকি হাসুন কিংবা খিলখিল। আপনার হাসি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে, বুকের ভিতর তুফান উঠবে আশপাশের মানুষজনের। এমনটা হোক মনে মনে কে না চান! মাধুরী, ঐশ্বর্য, দীপিকাদের মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁত আর উজ্জ্বল হাসি চাইলে এখন আপনিও পেতে পারেন।
নজরকাড়া হাসি চাইলে দাঁতে বসাতে পারেন এক কুচি হীরের টুকরো! কিংবা করতে পারেন ডেন্টাল ট্যাটুও! মডেল, অভিনেত্রী, কলেজ তরুণীদের অনেকেই এখন স্মাইল ডিজাইন করিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি যাদের সামনের দু’টি দাঁতের মাঝখানে বেশি ফাঁক রয়েছে, দাঁতে হলদেটে-কালচে ছোপ রয়েছে বা হাসলে মাড়ির অনেকটা দেখা গেলে পুরনো দাঁতকেই বিশেষ মোড়কে মুড়ে নতুন করে সাজিয়ে নিতে পারেন নিজের হাসিকে।
দাঁতে ট্যাটু সেফ?
সাইড এফেক্ট কিছু নেই। প্রধানত ইয়ং জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা শখ করে এটা করান। দাঁতের উপরের একটা এনামেল সরিয়ে বা না সরিয়ে পোর্সেলিনের একটা লেয়ার (ভিনিয়ার) তৈরি করে দাঁতের উপর কেমিক্যাল দিয়ে পেস্ট করে ফিক্সড করে দেওয়া হয়। ওই লেয়ারের মধ্যেই আপনার পছন্দ করা ডিজাইনের ট্যাটুও লাগানো থাকবে। আলাদা করে বিশেষ যত্নের দরকার পড়ে না। নিয়মিত দাঁত মাজলেও ট্যাটু উঠে যায় না। তবে ধাক্কা লাগলে, খুব শক্ত খাবার বা মাংসের শক্ত অংশ ভিনিয়ার করা দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে খেতে বারণ করা হয়। এতে ওই লেয়ার খুলে যেতে পারে। খুব হালকা হওয়ায়
পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভিনিয়ার কী?
দু’দাঁতের ফাঁক ভরাট করতে যে আস্তরণ বা লেয়ার বসানো হয় তাকে ভিনিয়ার বলে। প্রথমে দাঁতের ওপরের লেয়ার বা যাকে আমরা এনামেল বলি তাকে হালকা ঘষে নেওয়া বা গ্রাইন্ড করে নেওয়া হয়। তারপর ০.৩ -০.৫ মিলিমিটারের মতো পাতলা হয় এই লেয়ার দাঁতে সেঁটে দেওয়া হয়। দাঁতের রং অনেকের পছন্দ হয় না। তাঁরা চান হাসলে যেন ঝকঝকে দাঁত দেখা যায়। এমন ব্যক্তিরা হাসলে যে দাঁতগুলি দেখা যায় সেগুলি ঝকঝকে রঙের ভিনিয়ার করিয়ে নেন। যত্ন করে ব্যবহার করলে দীর্ঘদিন ভিনিয়ার ঠিক থাকে। ভিনিয়ার লাগানোর দশ-বারো বছর পরে হয়তো কারও মাড়ি সরে গেল, তখন ফের ফাঁক হয়ে যাবে। তখন ভিনিয়ার খুলে নতুন করে লাগিয়ে নেওয়া যায়। দাঁতে ক্রাউন পুরো দাঁতের উপরে বসানো হয়, কিন্তু ভিনিয়ারের আস্তরণ দাঁতের শুধুমাত্র সামনে বসানো হয়। ডাক্তার দাঁতের মাপ নিয়ে ল্যাবে পাঠান। ক্যাড-ক্যাম পদ্ধতির দ্বারা কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজাইন করে ভিনিয়ারটি তৈরি করা হয়। হাসি সুন্দর করতে সাধারণত উপরের পাটির সামনের ছ’টা দাঁত একসঙ্গে ভিনিয়ার করতে হয়। সামনের দাঁতে অতিরিক্ত ফাঁক থাকলে শুধু সেটাই যদি ভরাট করতে চায় তাহলে দুটি দাঁতে ভিনিয়ার করলেও হবে।
দাঁতে হীরে বা সোনা বসাবেন?
গজদাঁতে একটা ছোট্ট হীরের কুচি বসিয়ে হাসিকে নজরকাড়া করতে চান অনেকেই। এই হীরে সত্যিকারের হতেই হবে এমন নয়। খরচ কমাতে চাইলে হীরের মতো দেখতে ডেন্টাল জুয়েলারি বসানো যায়। দাঁতের মধ্যে হালকা একটু ড্রিল করে হীরের কুচিটি বসিয়ে দেওয়া হয়।
আগেকার দিনে সোনা বা রুপো দিয়ে দাঁতে ক্রাউন লাগানোর প্রচলন ছিল। সোনা, ফিলিং করার জন্য খুব ভালো মেটেরিয়াল। একটা দাঁত ফিলিং বা রেস্টোরেশন করতে মোটামুটি এক গ্রাম সোনা লাগে। এটি একটি খরচসাপেক্ষ পদ্ধতি। তবে সোনা-রুপোর দাম অনেক বেশি হওয়ায় এবং সৌন্দর্যের বিচারের নিরিখে এখন বেশিরভাগ মানুষ দাঁতের রঙের ফিলিং করান। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় লাইট কিওর কম্পোসিট। দাঁতে গর্ত বা ক্যাভিটি থাকলে কম্পোজিট দিয়ে ফিলিং বা রেস্টোরেশন করতে হয়। ভিনিয়ার করার সামর্থ্য না থাকলেও কম্পোজিট করানো যায়। সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে দাঁতে কম্পোজিট করে ফিলিং হয়ে যায়। তবে ভিনিয়ার করে পোর্সেলিন বসালে তার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় না। কম্পোজিট করার পর অনেকদিন হয়ে গেলে ফিলিংয়ের রং নষ্ট হয়ে যায়। তখন আবার চেঞ্জ করতে হবে। কম্পোজিট আধ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তার তৈরি করে দিতে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.