ছবি: সংগৃহীত
রুটি মানেই যে তা স্বাস্থ্যকর, সেটা বলা যায় না। কোন ধরনের আটা থেকে রুটি খাচ্ছেন তার উপরে পুরো বিষয়টা নির্ভর করে। কাদের জন্য কোনটি ভালো তা বুঝিয়ে বললেন অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মৌমিতা রায়চৌধুরী।
আজকাল ভাতের বদলে রুটি খান অনেকেই। অর্থাৎ লাঞ্চে রুটি এখন ডায়েট ফ্রিকদের অনেকেরই পছন্দ। আবার এ নিয়ে বিস্তর বিভ্রান্তিও আছে। কেউ বলেন ভাত-রুটি সমান, কেউ আবার বলেন ভাতের চেয়ে রুটিতে ক্যালোরি কম। তাই স্বাদে যা-ই হোক, রুটির কদর বেশি। বিশেষত অল্পবয়সিরা যাঁরা শরীরের বিষয়ে সচেতন, তাঁদের অনেকেরই রুটি পছন্দের। তবে শুধু আটার রুটি নয়, বিভিন্ন দানাশস্য থেকে আটা হয়, প্রতিটির আলাদা গুণ। আটা-ময়দার রুটির ক্যালোরি আর জোয়ার-বাজরা বা ছাতুর রুটির ক্যালোরি, স্বাস্থ্যগুণে অনেক তফাত আছে। তাই রুটি খেলেই রোগা হওয়া যাবে, মেদ জমবে না তা নয়, বিষয়টা কোন ধরনের আটার থেকে তৈরি রুটি খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে।
আটার রুটির গুণ
আমাদের রাজ্যে প্রায় ৮৫-৯০% বাড়িতেই গম থেকে তৈরি আটা দিয়েই রুটি বানানো হয়। প্রচুর পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি হজমে সাহায্য করে। পুষ্টিমূল্য বাড়াতে আটা মাখার সময় মিশিয়ে দিন ছানার জল, এর মধ্যে থাকা ওয়ে প্রোটিন আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। ক্যালোরির পরিমাণ বাড়াতে দিয়ে দিতে পারেন ড্রাই ফ্রুটস। পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো অল্প পরিমাণে খাওয়ার সময় মাখন, ঘি মাখিয়ে নিন। এতেও ক্যালোরির পরিমাণ কিছুটা বাড়ে।
গমের আটার তৈরি ১টি রুটিতে (২০ গ্রাম) ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬৬.৪ ক্যালোরি, ২ গ্রাম প্রোটিন, ২.৬২ গ্রাম ফাইবার থাকে। ওজন কমানোর ডায়েটে থাকলে পরিমাণ বুঝেশুনে খান। হজমের গোলমাল, গ্লুটেন ইনটরালেন্স থাকলে এড়িয়ে চলুন।
আটার পরিবর্তে ভরসা কীসে?
জোয়ারের রুটি: এতে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে ডায়াবেটিস কিংবা প্রি ডায়াবেটিস, তাঁদের জন্য এটি ভালো। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্ট ভালো রাখে। বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। জোয়ারে উপস্থিত ফসফরাস, ক্যালসিয়াম মহিলাদের মেনোপজের পর অস্টিওস্পোরোসিস রোধ করে।
বাজরার রুটি: বাজরা বা ‘পার্ল মিলেট’ ফাইবার, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণে সমৃদ্ধ। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হজমের সমস্যা দূর করে, শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে মনে রাখবেন, হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকলে এই রুটি একদমই খাওয়া যাবে না। এর মধ্যে উপস্থিত গয়ট্রোজেন আয়োডিনের শোষণে বাধা দেয়। এছাড়াও বাজরা যদি সঠিক ভাবে রান্না করা না হয়, তাহলে এর মধ্যে উপস্থিত অক্সালেট কিডনিতে অক্সালেট স্টোনের সৃষ্টি করে। যাঁদের কিডনিতে স্টোন হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা এড়িয়ে চলুন।
রাগির রুটি: রয়েছে ভিটামিন – বি কমপ্লেক্স, ই, সি যা ত্বক ও চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ নির্গত করে। রয়েছে জিঙ্ক এবং ম্যাগনেশিয়াম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, জ্বর, প্রদাহ প্রতিহত করে।
ডাল বা ছাতুর রুটি: ডালে ভেষজ প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। তাই যাঁরা ভেজিটেরিয়ান তাঁদের শরীরের পক্ষে এটি ভালো। তবে এতে রয়েছে ৬০% কার্বোহাইড্রেট। বেশি খেলে ওজন বাড়তে পারে।
বেসনের রুটি বা চিল্লা: ছোলার তৈরি আটা বা বেসন ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং খেয়াল রাখে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের।
দানাশস্য দিয়ে তৈরি আটার রুটি: হজমের গোলমাল থাকলে গমের আটার পরিবর্তে দানাশস্য দিয়ে তৈরি আটার রুটি খান।
ময়দায় ক্ষতি
মাঝেমধ্যে আটা না থাকলে বাড়িতে ময়দা দিয়ে রুটি তৈরি করে নেন অনেকে। তবে এটি শরীরের পক্ষে খুব একটা ভালো নয়। এতে যথেষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যাঁদের গ্লুটেন ইনটোলারেন্স আছে তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় ময়দা। ফাইবারের পরিমাণও কম। কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়, অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে।
খুব সাদা যে কোনও জিনিসের মধ্যেই রয়েছে বিপদ। যেমন: ধবধবে সাদা বর্ণের পাউরুটি, চিনি, ময়দায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। যাঁরা ডায়াবেটিসের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন, তাঁদেরকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম রয়েছে এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে রক্তে হঠাৎ শর্করার মাত্রা হেরফের হতে পারে না। এছাড়াও এতে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ওজন বাড়ায়, বিভিন্ন হৃদরোগের সমস্যা ডেকে আনে।
জরুরি জিনিস
শরীরের গঠন ও ক্যালোরির চাহিদার উপর নির্ভর করে দিনে কতটা পরিমাণে রুটি খাবেন। যতটা পরিমাণে রুটি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে ততটা পরিমাণেই খান। শরীরের চাহিদার তুলনায় কম খেলে পরবর্তীকালে হতে পারে আলসারের সমস্যা। তাই কখনও নিজে ডাক্তারি করে খাবারের পরিমাণ কমাবেন কিংবা বাড়াবেন না। দরকার হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শে থাকুন। উপকার পাবেন।
ক্যালোরি গাইড
একটি রুটি বানাতে সাধারণত ২০ গ্রাম আটা লাগে। সেই অনুপাতে রইল ক্যালোরি গাইড।
রাগি রুটি – ক্যালোরি ৬৫.৬ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ১.৪৬ গ্রাম, কার্ব ১৪.৪ গ্রাম, ফাইবার ২.৩ গ্রাম।
বাজরা রুটি – ক্যালোরি ৭৬ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ২.২ গ্রাম, কার্ব ১৪.৬ গ্রাম, ফাইবার ২.২৬ গ্রাম।
জোয়ার রুটি – ক্যালোরি ৬৫.৮ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ২.১২ গ্রাম, কার্ব ১৪.৪২ গ্রাম, ফাইবার ১.৩৪ গ্রাম।
বেসন রুটি – ক্যালোরি ৭৭.৪ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ৪.৪ গ্রাম, কার্ব ১১.৪ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম।
ছাতু রুটি – ক্যালোরি ৬৪ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ৪.৪ গ্রাম, কার্ব ৯.২ গ্রাম, ফাইবার ২.২০২ গ্রাম।
আটা রুটি – ক্যালোরি ৬৬.৪ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ২ গ্রাম, কার্ব ১৫ গ্রাম, ফাইবার ২.৬২ গ্রাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.