ছবি: সংগৃহীত
পার্লারে গিয়ে ফেশিয়াল করানোর মতো সময় যাঁদের হাতে নেই! বয়সের ছাপ, ব্রণর দাগ, কালো ছোপ, ঝুলে যাওয়া কিংবা কুঁচকে যাওয়া নির্জীব ত্বক নিয়ে নাজেহাল? যৌবনের জেল্লা ফেরাতে যন্ত্রনির্ভর বিজ্ঞানসম্মত ফেশিয়াল খুবই কার্যকর। ডার্মাটোলজিস্ট ডা. শচীন ভার্মা জানাচ্ছেন এ চিকিৎসার খুঁটিনাটি। লিখলেন জিনিয়া সরকার।
ত্বকেই আছে সৌন্দর্যের জাদু। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের টক্সিনের প্রভাব ত্বকে পড়ে। বর্তমানে দেখা যায় তিরিশ পেরোতে না পেরোতেই অধিকাংশের মুখেচোখে বয়সের ছাপ চলে আসছে। দূষণ, জীবনযাপন. অতিরিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, মানসিক চাপ কিংবা শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বুড়িয়ে যেতে পারে ত্বক। নিষ্প্রাণ ত্বককে সতেজ করতে কিংবা কুঁচকে যাওয়া স্কিন, ওরেন পোরস, কালো ছোপ প্রতিরোধে রয়েছে কেতাদুরস্ত প্রসাধনের রমরমা। পার্লারে পার্লারে চাহিদা বাড়ছেই। বিশেষ করে কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের আগে শত ব্যস্ততাতেও অতি প্রয়োজানীয় ফেশিয়াল, স্কিন টাইটেনিং করা। এখানেই নতুন উপায় মেডিক্যাল ফেশিয়াল। এই বিশেষ ফেশিয়াল অনেক বেশি উপকারী, কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
কী এই বিশেষ ফেশিয়াল?
পার্লারে গিয়ে নয়, যে ফেশিয়াল ডাক্তারবাবুর সহায়তায় সম্পন্ন হয় সেটা হল মেডিক্যাল ফেশিয়াল। এক্ষেত্রে ত্বক বিশেষজ্ঞরাই এই কাজটি করেন। পার্লারে যে ফেশিয়াল করা হয় তার সঙ্গে এই চিকিৎসা পদ্ধতি করা ফেশিয়ালের বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বেশ কিছু ফারাক রয়েছে। পার্লারে ফেশিয়াল করার আগে ব্লিচিং করে তারপর ফেশিয়াল ও ক্রিম মাসাজ করে ত্বকের জেল্লা বাড়ানো হয়। কিন্তু মেডিফেশিয়াল এমনই একটি ফেশিয়াল সেখানে যথার্থ পদ্ধতি মেনে উন্নত মেশিনের সহায়তায় ত্বককে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পুরো পদ্ধতি সম্পন্ন করতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এখানে প্রথমেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় প্রোডাক্ট ত্বকে প্রবেশ করানো হয়। এগুলো কেমিক্যাল সমৃদ্ধ নয়, সবই ত্বকের পুষ্টিকর উপাদান।
সাধারণ ফেশিয়াল সকলের জন্যই সমান পদ্ধতি মেনে করা হয়, কিন্তু মেডিক্যাল ফেশিয়াল রোগীর ত্বক অনুযায়ী কার কেমন পদ্ধতিতে করা হবে সেটা নির্ভর করে। তাই এক্ষেত্রে আউটকাম বা ট্রিটমেন্টের পর রেজাল্ট খুব বেশি নিখুঁত। ত্বকের সমস্যা ঠিক করা সম্ভব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। এক্ষেত্রে কোনও রকম সংক্রমণের প্রবণতাও খুবই কম।
মেডিক্যাল ফেশিয়ালের প্রাথমিক তিনটি পর্যায়, প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করা হয়, তারপর উন্নত মেশিনের সহায়তায় ত্বককে টানটান করা হয়, তারপর ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। এর পর বিশেষ মাস্ক প্রয়োগ করে ত্বককে আরও উজ্জ্বল করা হয়। সবশেষে গ্লো বাড়াতে বিশেষ লাইট প্রয়োগ করা হয় ত্বকে। এছাড়াও মেডিক্যাল ফেশিয়ালে এমন আরও অনেকগুলো ধাপ থাকে।
কী কী উপকারিতা?
এই চিকিৎসার দ্বারা ত্বকের কোলাজেন তৈরি হওয়া পুনরায় শুরু হয়।
কুঁচকে যাওয়া ত্বক টানটান হয়, ফাইনলাইন কমে।
ত্বকের উপরে যে ডেড লেয়ার তৈরি হয়, সেটা ধীরে ধীরে উঠে যেতে থাকে।
এই চিকিৎসায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে।
ব্রণর সমস্যা কমায়।
পুষ্টিগত সমস্যা থেকে ত্বকের সমস্যা হলে সেটাও মেটানো সম্ভব এই পদ্ধতিতে।
রোগীর ত্বকের ধরন অনুযায়ী এই চিকিৎসা নির্ভর করে।
নর্মাল ফেশিয়াল টানা করে গেলে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে। মেডি ফেশিয়ালে তেমন কোনও ভয় থাকে না।
ডেথ সেল, পোরস, ট্যান পরিষ্কার হয়, ত্বক ফুলে যেতে থাকলে সেটাকে প্রতিরোধ করা যায় এই পদ্ধতিতে।
বিশেষ ধরন
হাইড্রা ফেশিয়াল – বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে এই ফেশিয়াল করা হয়। যন্ত্রে ডার্মা বিল্ড থালে, সেটা কিনা ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে। ভাইটানল থাকে যা ত্বককে উজ্জ্বল করে। বিশেষ করে যাঁরা সবসময় ফেশিয়াল বা রূপচর্চা করতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুষ্ঠানের আগে যেমন বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, বার্থ ডে পার্টি হলে তখন এই ধরনের ফেশিয়াল করলে নির্জীব হয়ে যাওয়া ত্বক সতেজ হয়ে ওঠে। ইনস্ট্যান্ট গ্লো করে ত্বক।
মেডিক্যাল ফেশিয়ালও কি প্রতিমাসে করা প্রয়োজন?
সাধারণত আমরা পার্লারে গিয়ে যে ফেশিয়াল করি তা ১৫ দিন কিংবা একমাস অন্তর করতে হয়। কিন্তু মেডিক্যাল ফেশিয়ালের নির্দিষ্ট প্রোটোকল আছে। এই ফেশিয়াল প্রথম ছয় মাস নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে। তারপর তিনমাস অন্তর একটা করে করলেই কাজ হয়। খরচও সাধ্যের মধ্যেই। ৫-১০ হাজারের মধ্যে, নির্ভর করে কোন ধরনের ফেশিয়াল করার প্রয়োজন। ক্লিনসিং, টাইটনিং, ভিটামিন ইনফিউশ করা, মাস্ক লাগানো, এলইডি লাইট প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত ১৮ বছর বয়সের পর যে কেউ এই পদ্ধতিতে ফেশিয়াল করা যেতে পারে। বয়স্কদের জন্য সুন্দর ত্বক বজায় রাখতে অন্যতম পদ্ধতি এটি। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একেবারেই নেই বললেই চলে।
ফোন – ৯৮৩০৬৭২২২৪
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.