Advertisement
Advertisement
Diabetes

ডায়াবেটিসে গুরুত্বপূর্ণ ডায়েট, জেনে রাখুন খাবারের ভালো-মন্দ

ডায়াবেটিস থাকলে কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন ও ফ্যাট একেবারেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

Know about these important health tips about Diabetes diet
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:December 2, 2024 7:34 pm
  • Updated:December 2, 2024 7:34 pm  

ডায়াবেটিস থাকলে কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন ও ফ্যাট একেবারেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, না কি ব্যালান্স করে খেতে হবে? কী কী বুঝে খাবেন, তা জানালেন ডায়াটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়

এদেশে প্রায় ১১.৪ শতাংশ মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংখ্যার নিরিখে সেটি প্রায় ১০.১ কোটি। কিন্তু তাতেও শেষ নয়। এই সংখ্যাটি হল তাঁদের, যাঁরা ইতিমধ্যেই চিকিৎসাশাস্ত্রের বিচারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন। এর বাইরে আছেন তাঁরা, যাঁদের ডায়াবেটিস হওয়ার পথে। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৫.৩ শতাংশ অর্থাৎ ১৩.৬ কোটি মানুষ প্রি-ডায়াবেটিক। দিনে দিনে ডায়াবেটিস মহামারীর আকার নিচ্ছে লাইফস্টাইলের কারণে। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডায়েট। ডায়াবেটিসকে আমরা আয়ত্তে রাখতে পারব কি না তা নির্ভর করে শুধুমাত্র কয়েকটি হরমোনের উপর এবং সেই হরমোনগুলির কার্যকারিতা সঠিক থাকবে কি না তা অনেকটাই নির্ভর করে পুষ্টির প্রধান তিনটি উপাদান — কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও ফ্যাটের উপর।

Advertisement

কার্বোহাইড্রেট
ডায়াবেটিস হয়েছে মানেই কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে আড়ি, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কিটো ডায়েট কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীদের কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী ধরনের কার্বোহাইড্রেট খাবেন, কতটা এবং কখন খাবেন? দিনের তিনটি প্রধান মিল – ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার তিনটি ক্ষেত্রেই কার্বোহাইট্রেট রাখা যেতে পারে, চেষ্টা করতে হবে এই তিনটি ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের ধরন যেন আলাদা হয়, যেমন ব্রেকফাস্টে যদি রুটি থাকে, দুপুরে ভাত ও রাতে কোনও মিলেট বা ডালিয়া রাখা যায়। এতে খাবারের নতুনত্ব বাড়বে এবং খাবারের গ্লাইসেমিক লোড ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বজায় থাকবে।

Diabetes-diet-2

ডায়াবেটিসের সঙ্গে ভাতের সম্পর্ক কিন্তু ভালোই, রুটি বা ভাত যা-ই খান আপনি, তার পরিমাণের উপরেই কিন্তু রক্তে সুগার কতটা বাড়বে তা নির্ভর করে। আবার ঠান্ডা ভাতে সময়ের সঙ্গে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি হয় যা রক্তে সুগারের মাত্রা খুব কম বাড়ায়, এর সঙ্গেই বলা যেতে পারে ভাত যখন ডাল বা অন্য প্রোটিনের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয় তখনও তার গ্লাইসেমিক লোড অনেকটাই কমে যায়। আবার ওটস বা মিলেট খুব হেলদি ভেবে হয়তো খাচ্ছেন, কিন্তু খাচ্ছে রেডি-টু-ইট ভাবে। যা একেবারেই পলিশড তাই তার উপকার আপনার ধারণার চেয়ে অনেকটাই কমে। এই কারণে আমরা বলে থাকি ট্র‌্যাডিশনাল খাবারগুলি যতটা সম্ভব ডায়েটে রাখুন, দিনের যে কোনও একটা মিল হতে পারে কিনওয়া, বা মিলেট বা রাগি কিন্তু তা কখনওই যেন ভাত রুটিকে একেবারে ভুলিয়ে না দেয়।

প্রোটিন
প্রোটিন কিন্তু খুব সাবধানে ডায়েটে রাখবেন, পরিমিত প্রোটিন হতে পারে আপনার পরম বন্ধু কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন আপনার শত্রু হতে বেশিদিন নেয় না। কোন ধরনের প্রোটিন ডায়েটে রাখবেন সেই নিয়েও সংশয় আজ মানুষের মনে। অনেকের ধারণা কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে যথেচ্ছ মাছ মাংস খেলেই নাকি মুক্তি মিলবে ডায়াবেটিস থেকে, কিন্তু এটি একদম ভুল ধারণা। প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিলিয়ে মিশিয়ে ডায়েটে রাখতে হবে। ডিনারে আমিষ প্রোটিনের জায়গায় ছানা খুব ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ডাল, সয়াবিন, টক দই, এগুলি ডায়েটে রাখতে হবে মাছ, মাংস বা ডিমের সঙ্গে। কারণ এতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিকেলে মুড়ি চানাচুরের জায়গায় ডায়েটে রাখুন ছোলা মুগ বা মটরসিদ্ধ বা অঙ্কুরিত ছোলা, এতে প্রোটিনের চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি উপযুক্ত ফাইবারের উপস্থিতি রক্তে সুগারের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে। যাদের ফাস্টিং সুগার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না বা মাঝরাতে সুগার কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঘটনা ঘটে তাদের জন্য একটু আগে ডিনার করে নেওয়া এবং ঘুমানোর সময় এক কাপ উষ্ণ গরম দুধ কেশর বা হলুদ সহযোগে পান করা দরকার। তাতে এই সমস্যা থেকে চটজলদি রেহাই মেলে।

Protein-Food

ফ্যাট
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভালো ফ্যাট মানে পুফা (PUFA) ও মুফা (MUFA) যুক্ত ফ্যাট ডায়েটে রাখতে হবে। বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস যেমন আমন্ড, আখরোট ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তৈলাক্ত মাছও কিন্তু ডায়াবেটিসের বন্ধু, কারণ, এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
গুড ফ্যাটের তালিকায় বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন সিডস, যেমন ফ্ল্যাক্স, সানফ্লাওয়ার বা সিয়া সিড। এতে খুব ভালো গুণমানের প্রোটিনের সাথে EFA যুক্ত ফ্যাট আছে যা শুধু ব্লাড সুগার নয়, হার্টের জন্যও ভালো। রান্না টানা এক ধরনের তেলে না করে নানা ধরনের তেল দিয়ে করা যেতে পারে। কখনও সরিষার তেল ও সয়াবিন তেল বা সানফ্লাওয়ার তেল— এইভাবে ব্যবহার করলে তেলগুলি একে অন্যের পরিপূরক হয় কিন্তু মনে রাখতে হবে কখনওই দুটি তেলকে একসঙ্গে মেশাবেন না। তাই বোঝাই গেল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাট কেউই কিন্তু ডায়াবেটিসের শত্রু নয়, তাদের কীরকম ভাবে আমরা ব্যবহার করছি তার উপরেই কিন্তু সবটা নির্ভর করবে।

Diabetes-diet-3

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement