Advertisement
Advertisement
Homeopathy

হাঁচি থামাতে হাতিয়ার হোমিওপ্যাথি, কীভাবে সমস্যার সমাধান? জানালেন বিশেষজ্ঞ

আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া কিংবা নাক বন্ধ থাকার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন।

Know about Homeopathy treatment of Sneezing
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:October 16, 2024 3:03 pm
  • Updated:October 16, 2024 3:03 pm  

হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া মানেই সবসময় তা ভাইরাসজনিত নয়। বর্তমানে অ্যালার্জিজনিত কারণে এই সমস্যা বেড়েছে। শিশু, তরুণ কিংবা মধ্যবয়স্ক, সকলেরই হতে পারে নানা কিছু থেকে এমন অ্যালার্জি। হোমিওপ্যাথিতে চিরতরে মুক্তি সম্ভব। কীভাবে? জানালেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথির প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. অশোককুমার দাস

বিশেষত আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া কিংবা নাক বন্ধ থাকা ইত্যাদি সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। শিশু, তরুণ কিংবা মধ্যবয়স্কদের মধ্যে প্রবণতা বেশি প্রকাশ পায়। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীর সংখ্যাটা দিনে দিনে বাড়ছে।
বিভিন্ন রোগের কারণে এই সমস্ত উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়। যার মধ্যে অন্যতম হল অ্যালার্জি অথবা ভাইরাস সংক্রমণ।

Advertisement

অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বাড়ছে
বর্তমানে এদেশের মোট জনসংখ‌্যার প্রায় ১০-২৫ শতাংশ মানুষ অ্যালার্জিজনিত সর্দি, হাঁচি বা নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। মানবদেহে রোগ প্রতিহত করার একটি স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে যাকে ইমিউনিটি বলা হয়। যা পরিচালিত হয় ইমিউন সিস্টেমের মাধ‌্যমে। অ‌্যালার্জি হল শরীরের একপ্রকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সাধারণত খাবার, ধূলিকণা, পরাগ ইত‌্যাদি বাহ্যিক পরিবেশ থেকে আগত কিছু পদার্থের প্রতি আমাদের ইমি‌উন সিস্টেমের একটি অতি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়, যা বেশিরভাগ মানুষের জন‌্য তেমন ক্ষতিকারক নয়। এইসব পদার্থগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যালার্জেন (allergen) বলা হয়। অ‌্যালার্জিতে আক্রান্ত ব‌্যক্তি কোনও একটি নির্দিষ্ট অ‌্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে বিভিন্ন রকম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ‌্যমে হিস্টামিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। এই প্রতিক্রিয়া মানুষের শরীরে এক বা একাধিক জায়গায় প্রকাশ পায়।

Sneezing-Cold-2

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ‌্যমে যখন কোনও অ্যালার্জেন (ধুলা, পরাগ ইত‌্যাদি) আমাদের নাকের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তখন শুরু হয় নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। চিকিৎসার পরিভাষায় এই অসুখকে অ‌্যালার্জিক রাইনাইটিস (allergic rhinitis) বা হে ফিভার (Hey fever) বলা হয়।

আবার এই প্রতিক্রিয়া শ্বাসনালিতে হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, যাকে আমরা হাঁপানি বলি। যখন এই প্রতিক্রিয়া অন্ত্রে প্রকাশ পায় তখন পেট ব‌্যথা ও পেট খারাপ হয়। এই প্রতিক্রিয়া ত্বকে হলে অ্যাটোপিক (Atopic dermatitis) ডার্মাটাইটিস বা এগজিমা অথবা আমবাত (urticaria) রোগের সৃষ্টি হয়। একটা উদাহরণের মাধ‌্যমে ব‌্যাপারটা সহজে বোঝানো যাক, বেশিরভাগ মানুষ ডিম খেলে কোনও শারীরিক সমস‌্যা হয় না কিন্তু কারও কারও ডিম খেলে হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া শুরু হয়, কারওর ক্ষেত্রে পেটব‌্যথা, বমি, পেট খারাপ, অথবা কারও ক্ষেত্রে হাঁপানির কষ্ট বা আমবাতের ত্বকের চুলকানি, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া বা এগজিমার মতো সমস‌্যা প্রকাশ পায়। ডিম থেকে অ‌্যালার্জি বা যে কোনও জিনিস থেকে অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ কিন্তু বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হতে পারে। হোমিওপ‌্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ‌্যালার্জির এই ব‌্যক্তিগত বহিঃপ্রকাশকে ইডিওসিনক্রেসি বলা হয়।

কখন বুঝবেন অ্যালার্জির হাঁচি-সর্দি
অ‌্যালার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ
হঠাৎ হঠাৎ হাঁচি
নাক দিয়ে জল পড়া
নাক, চোখ ও মুখের তালুর চুলকানি
নাকবন্ধ
চোখ দিয়ে জল পড়া
চোখ লাল ও ফুলে যাওয়া
নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া
মাথা ও কানে যন্ত্রণা
গা, হাত-পা বা গলাব‌্যথা
ক্লান্তি, দুর্বলতা ও খিটখিটে মেজাজ
কখনও কখনও সামান‌্য কাশি।

Sneezing-Cold-3

সতর্ক না হলে জটিল হতে পারে
দীর্ঘদিন ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ফলে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন সাইনুসাইটিস, নাকের পলিপ, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, কানে পুঁজ, দীর্ঘ সময় ধরে নাক বন্ধ, স্লিপ অ‌্যাপনিয়া, শিশুদের মুখের ও দাঁতের গঠনের অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়। তাছাড়াও হাঁপানি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই এইসব জটিল সমস্যা এড়ানোর জন্য আমাদের সকলেরই প্রয়োজন অল্প লক্ষণে সতর্ক হওয়া। না হলে ক্ষতি হতে পারে।

কেন হয়?
অ‌্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণ ব‌্যক্তিগত জিন ও আমাদের পরিবেশের মধ্যে উপস্থিত নানা প্রকার অ্যালার্জেন্স। জিনগত কারণে কিছু কিছু মানুষের অ‌্যালার্জির প্রবণতা থাকে যা কি না অ‌্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের (allergen) সংস্পর্শে নাকের ঝিল্লিতে প্রদাহ
(inflammation) ঘটায়। যার ফলে এই অসুখের বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। সব বয়সের মানুষের এই রোগ হতে পারে। তবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে এই অসুখ অধিক পরিমাণে দেখা যায়।

রোগ নির্ণয়
রোগীর অসুখের পুরো ইতিহাসের উপর নির্ভর করে এই অসুখকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। প্রয়োজনে রক্তের ইমিউনোগ্লোবিউলিন (9gE) -র পরিমাপ ও ইওসিনোফিলের (eosinophil) সংখ‌্যা পরীক্ষা করা হয়। ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই-এর মাত্রা ১৪০ আইইউ/এমএল (140 IU/ml) এবং ইওসিনোফিলের সংখ‌্যা 80Cells/ml-র বেশি হলে এই রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা যায়। তাছাড়াও এলাইজা (ELISA) পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষার মাধ‌্যমে রোগীর কোন কোন জিনিসে অ‌্যালার্জি আছে তা কিছুটা হলেও ধরা যায়। এর পর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের মোকাবিলা সম্ভব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement