সুস্থ থাকার মূল হাতিয়ার রোগ প্রতিরোধ শক্তি। যা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা প্রতি ঋতুতেই পরিবর্তিত হয়। তাতেই কাবু হয় আট থেকে আশি। ইমিউনিটি ঠিক রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে এই তীব্র দাবদাহে। বললেন বারাকপুরের গ্যালাক্সি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সৌমাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউনিটি অনেকটা শরীর-স্বাস্থ্যের দ্বাররক্ষক বা প্রহরীর মতো। সুস্বাস্থ্যের সুরক্ষা কবচ বলা যায়। আমাদের শরীরকে বাইরে থেকে যে সব অণুজীব (ব্যাকটিরিয়া/ভাইরাস) আক্রমণ করে, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি থাকলে, সেই আক্রমণ সহজেই প্রতিহত করা যায়। অন্যথায় সহজেই অসুস্থ, সংক্রামিত হয়ে পড়তে হয়। যাঁরা প্রায়শই রোগভোগে আক্রান্ত হন, তাঁদের ইমিউনিটি ‘পাওয়ার’ কম ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু তা কেন, তার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।
লক্ষণ চিনতে হবে
যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁরা সহজেই সংক্রামক অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হন। তাঁদেরই সাধারণত বার বার সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, জ্বর, ফুসকুড়ি প্রভৃতি দেখা যায়। তবে কিছু মৌলিক পরীক্ষা আছে, যার মাধ্যমে ‘ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি’ তথা কম ইমিউনিটির মানুষদের শনাক্ত করা যেতে পারে। যেমন টোটাল হিমোগ্রাম, সিরাম ইমিউনোগ্লোবিউলিন মাত্রা, আমাদের শরীরে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মাত্রা প্রভৃতি। বয়স, লিঙ্গ অনুসারে এই নিয়ামকগুলি পরিমাপ করা হয়। সাধারণত, শরীরে এক বা একাধিক উপাদানের ঘাটতি হলে ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি হতে পারে।
যাঁর ইমিউনিটি কম, তাঁকে বার বার নানা ধরনের অসুস্থতা ভোগাবে। যেমন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (বারংবার কাশি এবং সর্দি), গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ (দীর্ঘস্থায়ী ডায়েরিয়া), ত্বকের সংক্রমণ (নন হিলিং আলসার), বারবার মূত্রনালির সংক্রমণ প্রভৃতি। নবজাতকদের ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ডিজঅর্ডার সেপসিস-এর (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ) মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। শৈশবে প্রাথমিক ইমিউনোডেফিসিয়েন্সির সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক জেনেটিক সিনড্রোম রয়েছে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন: আমাদের অনিয়ন্ত্রিত, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা আমাদের অজান্তেই আমাদের ইমিউনিটির উপর প্রভাব ফেলছে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, শরীরচর্চার অভাব, ভাজাভুজি-মশলাদার খাবারে আসক্তি, ধূমপান, মদ্যপানের কুফল শরীরকে পোহাতে হচ্ছে। ওবেসিটি, পেটের সমস্যা বাড়ছে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমছে।
মানসিক চাপ: স্ট্রেস আজকাল অনেক রোগেরই উৎস। অপুষ্টিকেও ডেকে আনে। রোজকার জীবনে যত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বাড়বে ততই তার প্রভাব পড়বে শরীরের উপর। ফলে, ইমিউনিটি কমবে।
কম ঘুম: কাজের চাপ, পড়াশোনার চাপ এবং দৈনন্দিন নানা কারণে মানুষের ঘুম কম হচ্ছে। তার ফল সরাসরি লক্ষিত হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার উপর। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন না করলে কোনওভাবেই এই ঘাটতি দূর করা যাবে না।
কেন বার বার কমে
ইমিউনোডেফিসিয়েন্সির অনেক কারণ রয়েছে। শৈশবে যে যে সাধারণ কারণে এটি হতে পারে, তা হল– জেনেটিক্স, অপুষ্টি, স্থূলতা, সেপসিস, ভাইরাল ইনফেকশন ইত্যাদি। অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি হতে পারে ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী স্টেরয়েড গ্রহণ, যক্ষ্মা, এইচআইভি, অপুষ্টির কারণে। এই পোস্ট কোভিড যুগে, অনেক পোস্ট কোভিড (মাঝারি থেকে গুরুতর) বেঁচে থাকা রোগীদেরও ‘ইমিউনোডেফিসিয়েন্ট’ হিসাবে পাওয়া যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন
শিশুদের ক্ষেত্রে ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি প্রতিরোধ করতে বেশি সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে করণীয় হল– সুষম খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক কসরত, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা, স্কুলে বা জনসমাবেশে মাস্ক ব্যবহার করা প্রভৃতি। এছাড়াও অভিভাবকদের অবশ্যই প্রতিদিন সন্তানের খাদ্যতালিকায় অন্তত ১০০ গ্রাম ফল রাখতে হবে।
ঘাটতি কাটাবেন কী করে?
আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখতে কিছু সাধারণ এবং সহজ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। এর মধ্যে সবুজ শাকসবজি- তাজা ফলমূল সেবন, খাওয়ার আগে নিয়ম করে হাত ধোওয়া, নিয়মিত ব্যবধানে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কেউ ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি-র লক্ষণ প্রত্যক্ষ করবেন, তখনই উচিত সময় নষ্ট না করে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যাঁরা মদ্যপানে আসক্ত, তাঁদের লিভারের পরীক্ষা করাতে হবে।
ফোন – ২৫৯২২৫৯২
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.