বৃষ্টি হচ্ছে। তার সঙ্গে ভ্যাপসা গরমও রয়েছে। এমন মরশুমকে মোটেও হালকাভাবে নেবেন না। কারণ এই সময়টাই যে কোনও রোগের আঁতুড়ঘর। বিশেষ করে বাচ্চার দিকে নজর রাখুন। নিজের আদরের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে কী করবেন? বুঝিয়ে বললেন ডিসান হাসপাতালের পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. অনির্বাণ বসু।
বর্ষা আসবে আসবে করছে, এখনও সেভাবে বর্ষার একনাগাড়ে বৃষ্টির দেখা না মিললেও মাঝেমধ্যে হচ্ছে। সকালে গরমে ঘামে ভিজতে হচ্ছে, বিকেলে হয়তো একটু স্বস্তির বৃষ্টি। এমন অবস্থায় কিন্তু শরীরের অবস্থা বেশ খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের এমন আবহাওয়া বেশ কাহিল করে। সংক্রামক অসুখ, জলবাহিত, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে। অসাবধান হলেই জটিল হয় পরিস্থিতি। খেয়াল রাখতে হবে অনেক কিছুই।
কিছু জরুরি ভ্যাকসিন, এখনও না দিলে নজর দিন সেদিকে বর্ষায় বিভিন্ন রোগের থেকে বাঁচতে শিশুদের বেশ কিছু ভ্যাকসিন দেওয়া খুব জরুরি। যার সবকটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্ডে কিংবা সরকারি গাইডলাইনে উল্লেখ নাও থাকতে পারে। যেমন-
ফ্লু ভ্যাকসিন – শিশুর জন্মের ছয় মাসে এবং সাত মাসে ভ্যাকসিনের প্রথম দু’টি ডোজ নিতে হয়। এরপর বর্ষাকালের আগে ৫-৬ বছর বয়স অবধি একটা করে ডোজ প্রত্যেক বছর নেওয়া আবশ্যক।
মেনিঞ্জকক্কাল ভ্যাকসিন – এক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মের ৯ মাস এবং ১২ মাসে দুটো ডোজ দেওয়া হয়।
চিকেনপক্স – জন্মের ১৫ মাস বয়সে প্রথম ডোজ ও প্রথম ডোজের ৩ মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।
টাইফয়েড – বাচ্চার ৬ থেকে ৯ মাস বয়সের মধ্যে একটা ডোজ নিতে হবে। যদি কোনও ভাবে মিস হয়ে যায় সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি নেওয়া জরুরি।
হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন – জন্মের ১ বছরে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজটি ৬ মাস পর বাচ্চাকে দিতে হবে। অবশ্যই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ আগে নেবেন।
শুরুতে মাথায় রাখুন
এই সময় ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগান্তি বাড়ে। বিশেষত যাদের ইমিউনিটি কম তাদের ঝুঁকি বেশি। ফ্লুয়ের প্রকোপে হাঁপানি, নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে। এছাড়া কাটা ফল, বাইরের খাবার খেলে কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের রিস্কও রয়েছে। লিভারে প্রকোপ পড়ে।
তাই এই বৃষ্টির মরশুমে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। বাড়ির আশেপাশে কোথাও জল জমতে দেবেন না। বড়দের মধ্যে যদি কারও কোনও রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তবে বাচ্চাদের থেকে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাইরের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
শিশুর বিশেষ যত্ন
এই সময় মশার প্রকোপ খুব বাড়ে। তাই মশারির ব্যবহার জরুরি। মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু প্রকোপ কমাতে এই পথ অবলম্বন করা সবচেয়ে নিরাপদ।
সংক্রমণজনিত অসুখ খুবই ছোঁয়াচে। বাড়ির কারও সর্দি কাশি কিংবা জ্বর হলে তার সামনে না গিয়ে হাঁচি কাশির সময় নাক মুখ ঢেকে রাখা, বারবার হ্যান্ডওয়াশের ব্যবহার জরুরি। এগুলো শিশুকে শেখাতে হবে। বিশেষ করে স্কুলে অন্য শিশুর সংস্পর্শে এলে এই সংক্রামক অসুখ ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে মাস্কের ব্যবহার জরুরি।
এই সময় জলবাহিত রোগের প্রকোপ খুব বেশি। শিশুর স্নানের জল থেকে পান করার জল সবই হতে হবে জীবাণুমুক্ত। ফুটিয়ে জল পান করলে ভালো।
বৃষ্টি হচ্ছে, আবহাওয়া একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভেবে শিশুকে স্নান না করিয়ে রেখে দেবেন না।
এই সময় পুষ্টির দিকেও নজর দিন। যেগুলো ইমিউনিটি বাড়ায়। যেমন – সাইট্রাস ফুড (মোসাম্বি, কমলালেবু), বাদাম, প্রোবায়োটিক (ইয়োগার্ট, দই, লস্যি) খাওয়াতে পারেন। তুলসীপাতা, আদা, মধু বিভিন্ন হার্বাল জিনিস খাওয়ান, এতে গলায় ইনফেকশন থাকলে সেগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফিজিকাল অ্যাকটিভিটি বা হাঁটা, খেলাধুলো করার অভ্যাস বজায় রাখুন, শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের (অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা) যেন ঘাটতি না হয় সেদিকে নজর দিন।
লক্ষণ দেখলেই সাবধান
জ্বর এলে এই সময় খুব সতর্ক হোন। জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি-কাশি, লুজ মোশন হয়, এবং তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত যায় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব হওয়া শিশুদের স্বাভাবিক ব্যাপার, এর কম হলে সাবধান হোন।
ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে। এই সময় সংক্রমণের কারণেও এমন হতে পারে।
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। ফল, সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটে রাখতে হবে।
ফোন – ৯০৫১৭১৫১৭১
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.