জামাইষষ্ঠী বলে কথা! একটু কবজি ডুবিয়ে খাবেন না? শ্বশুরবাড়ির আদর-আবদারে খেয়ে তো নিলেন, তার পর পেটের কী হবে? সে তো আপনার মতো জামাই মহাশয় নয় যে যা খাবে তাই সইবে। বদহজম, পেটের গন্ডগোল হতেই পারে। তবে এই এক কারণে যে এগুলো হয় তা তো নয়। এর নানা কারণ হতে পারে। তা নিয়ে কথা বললেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. সুনীলবরণ দাস।
শুধু খাবারটাই একমাত্র শত্রু নয়। তার সঙ্গে আরও বেশ কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে মেনে না চললে পেটের সমস্যা চলতেই থাকে সুপাচ্য আহারের পরও। চোঁয়া ঢেকুর, বুকজ্বালার জ্বালায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে জীবন। বেশি পাত্তা না দিয়েই ঘরে থাকা ওষুধ কিংবা মুঠো মুঠো জোয়ান খেয়ে নিরাময় খুঁজলেও আসলে সমস্যা যায় না। বাড়তে থাকে জটিল রোগের ঝুঁকি।
বদহজমের যোগ যেথায়
শরীরের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়মের বেড়াজাল ভাঙলেই বিপদ। অনেকে আবার ইচ্ছা করে ভাঙেন না। করে ফেলেন অজান্তেই। সেগুলো কী জানেন? খাওয়ার সঙ্গে যে মানসিক যোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়ে কেউ ভাবেনই না। দেখছেন খাবার জায়গাটা ততটা পরিচ্ছন্ন নয়, কিন্তু খিদে পেয়েছে তাই খেয়ে নিলেন। মনে থেকে গেল সেই অতৃপ্তি। বদহজম হতে বাধ্য।
খাবার পেটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা বিছানা খোঁজেন, সাবধান। খুব খারাপ অভ্যাস এটা। খাওয়ার পরে শুয়ে পড়লে ইন্টেস্টাইনের মুভমেন্ট ধীর গতিতে হয়। রক্তে বাড়ে শর্করার পরিমাণ। যে কারণে সুগারের প্রবণতা বাড়ে। সঙ্গে আসে শরীরের অস্বস্তিভাব। বদহজমের লক্ষণগুলিও। তাই কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন, ঘরেই হালকা কাজ করুন। তার পর অল্প বিশ্রাম নিতে পারেন।
তাহলে কী করবেন?
ঘড়ি ধরে খাবার খান। প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এরকম নয় যে দুপুরের খাবার ব্রেকফাস্টে খেয়ে নিলাম। আসলে খিদে পেলে সময় অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCL) নির্গত হয়। যেটা খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে। সময় মতো সঠিক খাবার না খেলে এই অ্যাসিড নিউট্রিলাইজড হতে পারে না, ডেকে আনে বদহজমের সমস্যা।
আগে থেকেই যাঁদের রয়েছে কোমর্বিডিটির যেমন হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যাথা, গলব্লাডারে সমস্যা। তাঁদের ক্ষেত্রে কড়া পরিমাণে ব্যথার ওষুধ ডেকে আনে জ্বালা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা। পেপটিক আলসার ডিজিজে যেহেতু সব সময় অ্যাসিড সিক্রেশন বেশি থাকে তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই বদহজমের সমস্যাও দেখা যায়।
এছাড়াও, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে দুধের কোনও খাবার খেলে তা হজম হতে চায় না কিংবা গ্লুটেন ইনটলারেন্স থাকলে রুটি খেলে বা আটা-ময়দার খাবার হজমে অস্বস্তি হয়।
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস যাঁদের রয়েছে, সে ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু এনজাইমগত সমস্যাও। প্যানক্রিয়াটাইটিস হল অগ্ন্যাশয় ফুলে যাওয়া। যার ফলে শরীরের মধ্যে সৃষ্টি হয় কিছু অস্বাভাবিকতা।
মনে মনে ভালো থাকুন, পেটও ঠিক থাকবে
পড়াশোনা, কেরিয়ার, পারিবারিক চাপ সামলাতে গিয়ে এখন প্রত্যেকের মাথায় একাধিক চিন্তা। যা থেকে হয় বদহজম। এর প্রকোপ থেকে বাঁচতে চাইলে সবার প্রথম হাসিখুশি থাকতে হবে। আজকাল অফিসের চাপে মন খুলে কথা বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এখন সব ইতিহাসের খাতায়।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, মনের মানুষের সঙ্গে গল্প করা, মন খুলে কথা বলা, ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো, পরিবারকে সময় দেওয়ার মতো ভালো অভ্যাসগুলো করুন। মানসিক চাপ কাটাতে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাতে পারেন। মন যত ভালো থাকবে ততই ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো করে কাজ করবে। পেট ভালো রাখতে মনের শান্তিটাও খুব জরুরি।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই অর্ধেক রোগ আপনি আপনিই গায়েব হয়ে যাবে। অবসাদ কাটাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অবশ্যই। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না তা জানা আগে দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শেই একাধিক পরীক্ষা করতে হবে। ভিতরে ভিতরে আগে থেকে কোনও রোগ, বা কোমর্বিডিটি রয়েছে কি না নির্ণয় করে দেখতে হবে। শরীরের ভিতরে সমস্ত অর্গান সুস্থ আছে কি না তাও পর্যবেক্ষণ জরুরি। পরামর্শমতো এগোলে গোটা জীবনটাই অনেকটা সুস্থভাবে কাটানো সম্ভব।
ফোন – ৯৮৩৬৬২৫৮৮৯
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.