ব্যালন ডি'অর জয়ী রদ্রি।
শিলাজিৎ সরকার: একটা-দু’টো নয়। অপেক্ষাটা ৬৪ বছরের। সেই কবে ১৯৬০ সালে লুইস সুয়ারেজ জিতেছিলেন। তারপর আর কোনও স্প্যানিশ ফুটবলারের হাতে ওঠেনি ব্যালন ডি’অর। অথচ স্পেনের দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার জার্সিতে বর্ষসেরা হয়েছেন বহু ফুটবলার। জোহান ক্রুয়েফ, রোনাল্ডো থেকে শুরু করে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। গত ৬৪ বছরে দুই ক্লাবের এক ডজন সদস্য সবমিলিয়ে ২১ বার ব্যালন ডি’অর জিতে ফেলেছেন।
ফলে সোনালি বলের দখলদারির ক্ষেত্রে স্প্যানিশ-যোগ বেশ ভালোমতোই ছিল।
তবে তারপরও স্প্যানিশ ফুটবলে একটা চাপা হাহাকার ছিলই। কোনও স্প্যানিশ ফুটবলার তো আর ব্যালন ডি’অর জিততে পারেছেন না। এমিলিও বুত্রাগুয়েনো থেকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। সেরা তিনে ঢুকে পড়লেও সেরা হওয়া হয়নি। অবশেষে সেই অপেক্ষা শেষ করলেন রদ্রিগো হার্নান্ডেজ কাসকান্তে। ওরফে রদ্রি। সোমবার রাতের পর থেকে যাঁর নামের সঙ্গে আর কোনও বিশেষ পরিচিতি যোগ করার প্রয়োজন নেই। স্পেনের জাতীয় দল থেকে শুরু করে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি– সবক্ষেত্রেই দলকে সাফল্যের সরণিতে ধরে রাখার কারিগর যিনি। আর সেই রদ্রিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্পেনের সহকারী কোচ পাবলো আমো আগুয়াডো। দেশের বাড়িতে বসেই যিনি টিভির পর্দায় দেখেছেন রড্রির ব্যালন ডি’অর জেতার মুহূর্তটা। আর গত প্রায় দু’বছরে সাক্ষী থেকেছেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের বহু জাদুকরী মুহূর্তের। ছাত্রের হাতে সোনালি বল ওঠা প্রসঙ্গে সংবাদ প্রতিদিন-কে ফোনে যা বললেন পাবলো, হুবহু তুলে দেওয়া হল নিচে…
“আমি আশা করেছিলাম রদ্রির হাতেই ব্যালন ডি’অর উঠবে। ও একজন দুর্দান্ত প্লেয়ার হওয়ার পাশাপাশি অসাধারণ সতীর্থও। আর আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ফুটবল একটা দলগত খেলা। আমি রদ্রির সাফল্যে খুশি। আমি স্প্যানিশ ফুটবলের জন্য খুশি। আমরা সবসময় ফুটবলের উন্নতির চেষ্টা করি। আর রদ্রি ফুটবলের মূল্যবোধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তার সঙ্গেই ও একজন খাঁটি মানুষ। বিনয়ী। পরিশ্রমী।
দেখুন, প্রতিভা থাকলে শ্রেষ্ঠত্বের সারিতে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে নিজের কাজের প্রতি একাগ্র হতে হবে। মন দিয়ে কাজটা করতে হবে। ফুটবলের ক্ষেত্রে নিজেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী রাখা সেই একাগ্রতার অংশ। রদ্রি এখনও একটা বল পেলে যেন বাচ্চা হয়ে যায়! কিন্তু যখন যেটা করতে হবে, সেটা করার ক্ষেত্রে পিছপা হয় না। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে না। এই দু’টো বিষয় কিছুটা পরস্পরবিরোধী বটে। তবে এই দুইয়ের উপস্থিতি না থাকলে শ্রেষ্ঠদের সারিতে আপনার আসন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। রদ্রি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই। এত কিছু জিতেছে। তবে বিন্দুমাত্র বদল হয়নি ওর।
রদ্রি ব্যালন ডি’অর জেতায় কিছু বিতর্ক হচ্ছে। জানি না, কেন হচ্ছে। তবে এটুকু বলতে পারি, যোগ্য হিসাবেই ও এই সম্মান পেয়েছে। রদ্রি এমন একজন ফুটবলার, যাকে আগামী প্রজন্মের সামনে আমরা উদাহরণ হিসাবে দেখাতে পারি। ওকে দেখে বাচ্চারা শিখবে একজন ভালো ক্রীড়াবিদ কীভাবে তৈরি হয়? ও যে শুধু সেরা, তাই নয়। বরং ও কীভাবে সেরা হয়েছে, সেটাও শিক্ষণীয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.