বাগানের দুই প্রাণভোমরা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও দিমি।
দুলাল দে: এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য কোচ হলে নিঃসন্দেহে পাশ কাটিয়ে যেতেন। আর না হলে বলতেন, এত ভাল ভাল ফুটবলার নিয়ে প্রথম একাদশ গঠন করা রীতিমতো কঠিন কাজ। এমনকী প্রথম দল তৈরি করতে গিয়ে কোচের ঘুমও নষ্ট হতে পারে। কিন্তু মোহনবাগান কোচ হোসে মলিনা অন্যরকম। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে বাসেন। তাই দ্বিতীয়বারের জন্য দায়িত্ব নিয়েও ডুরান্ড ফাইনালের আগে রীতিমতো ফুরফুরে মোহনবাগান কোচ। বলছিলেন, ‘দলে প্রচুর ভাল ফুটবলার থাকলে প্রথম একাদশ গড়তে সমস্যা হবে কেন। বরং আমার জন্য ব্যাপারটা ভালই। ঠিক ঠিক পজিশনে ঠিক ঠিক ফুটবলার খেলানো যায়। আর দল গড়তে বসে যদি দেখি পজিশন মতো ঠিক ঠাক ফুটবলার নেই., তাহলে তো আরও সমস্যা।’
তাহলে শনিবার ডুরান্ড ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশ কী ভাবে তৈরি করবেন তিনি?
এইসব ক্ষেত্রে অন্যান্য কোচরা যা করেন, মলিনাও তার ব্যতিক্রম নন। ঠিক করেছেন, শনিবার সকালে ফের একবার সবাইকে দেখবেন। তারপর শেষ প্র্যাকটিসে ফুটবলারদের ফিটনেস বিচার করেই প্রথম একাদশ ঠিক হবে। আর তারমধ্যেই সবুজ-মেরুন সমর্থকদের জন্য ভাল খবর, চোট কাটিয়ে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই খেলার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু। কোচ মলিনার ভাষায়, ‘আগেরদিনও প্র্যাকটিসে ভালই সব কিছুই ঠিকঠাক করেছে শুভাশিস। খেলার মতো জায়গায় রয়েছে।’
গতবারের ডুরান্ড চ্যাম্পিয়নরা এবারের ফাইনালেও হট ফেভারিট বলাই বাহুল্য। তাও গতবার ফাইনালে ঘরের মাঠেই প্রতিপক্ষ ছিল ইস্টবেঙ্গলের মতো শক্তিশালী দল। এবার সেখানে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। যারা এই প্রথমবারের জন্য ডুরান্ড ফাইনাল। সেখানে ঘরের মাঠে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে মাঠে নামবেন কামিংসরা।
তবে ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলাটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আলাদা করে কোনও সুবিধে হবে বলে মনে করছেন না মলিনা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন, ‘মাঠে নেমে পড়লে এগারোজনের বিরুদ্ধে এগারোজনের খেলা। সেখানে মাঠের বাইরে কী হচ্ছে, সেটা খুব একটা প্রযোজ্য নয়। তখন প্রতিপক্ষ এগারো জনের বিরুদ্ধে আমাদের এগারোজন কীরকম খেলছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেভাবেই নিজেদের তৈরি করছি, যাতে নর্থইস্টকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’
শুরুতে আইএসএলের দলগুলি নিয়মের বাঁধায় ডুরান্ড খেলতে বাধ্য হত, তখন কোনও দলই পুরো দল নিয়ে ডুরান্ডে নামত না। বেশিরভাগ দলের কোচের ব্যাখ্যাই ছিল, আইএসএলের প্রস্তুতি হিসেবে ডুরান্ডকে দেখছে তারা। অনেক সময় সেরা ফুটবলারদের খেলানো হত না। কিন্তু এই মরশুমে এসে পরিস্থিতি বদলেছে। তবে এরই মধ্যে সামনের মাসে এএফসির খেলা রয়েছে মোহনবাগানের সামনে। স্বাভাবিক ভাবেই মলিনার কাছে প্রশ্ন গিয়েছিল, ডুরান্ড কাপটা কি এএফসির প্রস্তুতির জন্য ভাল জায়গা হয়ে গেল? সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নটিকে মাঠের বাইরে ফেলে দিয়ে মলিনা বললেন, ‘একদমই না। কোনও প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে হয়। সেগুলি আমরা খেলেছি। ডুরান্ড একটা সিরিয়াস প্রতিযোগিতা। এখানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলছি। ডুরান্ড কখনও এএফসির প্রস্তুতি নয়।’
চোট কাটিয়ে শুভাশিসের দলে ফেরা যেমন মোহনবাগানের জন্য স্বস্তির কারণ, সেরকম খারাপ খবর হল, ডুরান্ডের অন্যান্য ম্যাচের মতো ফাইনালে নেই জেমি ম্যাকলারেন, আশিক কুরিয়ণ এবং ধীরাজ সিং। এদের ছাড়াও মোহনবাগানের যে ফরোয়ার্ড লাইন, তাতে শনিবার চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটাই বিস্ময়কর। বিশেষ করে যে দলের আক্রণভাগের ফুটবলারদের নাম, দিমি পেত্রাতোস, কামিংস এবং গ্রেগ স্টুয়ার্ট। অনেকে বলছেন, এই লাইনআপ এই মুহূর্তে আইএসএলের সেরা লাইন। সবুজ-মেরুনের তারকা ফুটবলার গ্রেগ স্টুয়ার্টও স্বীকার করে বললেন, ‘খাতায় কলমে বললে অবশ্যই সেরা। কিন্তু খেলা শুরু হয়ে গেলে তখন পারফরম্যান্সটাই শেষ কথা। ’
এদিনও সাংবাদিক সম্মেলনে প্রসঙ্গ ওঠে গোলকিপার বিশাল কাইথের। মলিনা নিজেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, বিশাল জাতীয় দলে নেই কেন? আমি অন্য কোচের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আমার মতে গোলকিপার পজিশনে বিশালই এই মুহূর্তে এক নম্বর।’ কিন্তু বিশালের জন্য পর পর ম্যাচ টাইব্রেকারে জিততে হচ্ছে। ফাইনালে কি বিশাল নির্ভরতা কমবে? মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘এটা এভাবে দেখা ঠিক না। কোনও একজনের উপর ম্যাচ হারা-জেতা নির্ভর করে না। তবে বিশাল দলের সম্পদ।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.